কুমিল্লা শহরের কোতোয়ালির ট্রাংক রোডের চকবাজারে রয়েছে বেসরকারি পদ্মা ব্যাংকের শাখা অফিস। সামশুন্নাহার টাওয়ারের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায় চলে ব্যাংকটির কার্যক্রম। আর এই শাখাতেই ঋণ বিভাগে সর্বসাকুল্যে ২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন নুসরাত জাহান তানিয়া।
কিন্তু পদ্মা ব্যাংকে সামান্য টাকার বেতনে চাকরি করলেও নুসরাত পরিবার নিয়ে কুমিল্লা এবং ঢাকায় থাকেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে, চড়েন দামি গাড়িতে।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি মারা যাওয়া ছোট বোন মোসারাত জাহান মুনিয়াকে রাজধানী অভিজাত এলাকা গুলশানে লাখ টাকার দামি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছিলেন নুসরাত নিজেই।
কিন্তু অল্প টাকার বেতনে চাকরি করলেও নুসরাত আর মুনিয়া বিলাসী জীবনযাপন কীভাবে করতেন? এমন বিলাসিতার কাড়ি কাড়ি টাকা কোথা থেকে আসত- এসব প্রশ্ন ঘুরপাক করত কুমিল্লার চকবাজার শাখার ব্যাংকের একাধিক সহকর্মীসহ নুসরাতের আত্মীয়স্বজনদের মনেও। দুই বোন নুসরাত-মুনিয়ার বিলাসী জীবনযাপনের রহস্য উন্মোচন করতে অনুসন্ধানে নামলে একের পর এক বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য-উপাত্ত।
কুমিল্লা শাখার পদ্মা ব্যাংকে চাকরির আড়ালে নুসরাত নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা দেহ ব্যবসা। ব্যাংকের ঋণ বিভাগের মার্কেটিং অফিসার হিসেবে ব্যাংকের অফিসিয়াল কাজের চেয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দেহ ব্যবসার খদ্দের ধরতেই যেন বেশি মনোযোগ ছিল নুসরাতের।
ব্যাংকের ঋণ বিভাগে কাজ করার সুযোগে কুমিল্লার ব্যাংকের গ্রাহকের সঙ্গে কৌশলে গড়ে তুলেন গভীর সম্পর্ক। আর সেই সম্পর্কের মাধ্যমেই দেহ ব্যবসার খদ্দের জোগাড় করতেই ব্যতিব্যস্ত থাকেন নুসরাত। ঢাকা এবং কুমিল্লার একাধিক ফ্ল্যাটে ওইসব খদ্দের আনন্দ-ফুর্তি করতেন। আর নুসরাতের ওই রংমহলের প্রধান আকর্ষণ ছিল তারই সুন্দরী ছোট বোন মুনিয়া।
পদ্মা ব্যাংকের একাধিক সহকর্মী এবং বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজনও নুসরাতের এমন অনৈতিক বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকারও করেছেন।
তারা বলেছেন, এই নুসরাতের কারণে পদ্মা ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, কিশোরী মেয়েরা প্রলোভনে পড়ে খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আর অনেক নারীর সুখের সংসার ভেঙে চুরমার হচ্ছে। দেশের গোয়েন্দা পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করলেই ব্যাংকে চাকরির আড়ালে নুসরাতের অন্ধকার জগতের তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তারা।
খুলনা বিভাগের বাসিন্দা কুমিল্লায় নুসরাতের সঙ্গে কাজ করছেন ব্যাংকের এমন একজন সহকর্মী বলেন, ‘বিভিন্ন কমিশনসহ সর্বসাকুলে ২৫ হাজার টাকা বেতন পাই। সেই টাকায় বাড়ি ভাড়া দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমার চলা খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু নুসরাত একই বেতনে চাকরি করলেও থাকেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে আর চড়েন দামি গাড়িতে। এই রহস্য নিয়ে অফিসে কানাঘুষা চললেও কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পান। কারণ, এই নুসরাতের পেছনেই আছে হুইপপুত্র নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন।’
আরেক সহকর্মী বলেন, ‘নামেমাত্র চাকরি করলেও তিনি ব্যাংকের ক্লাইন্টকে নানা কায়দায় আকৃষ্ট করে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করছেন। সোজা কথায় বললে- এখান থেকে খদ্দের নিয়ে খারাপ কাজ করছে, মোটা অঙ্কের টাকা কামাচ্ছে। সেই টাকায় দামি বাড়ি আর গাড়িতে চড়েন। ব্যাংকের উপর মহলও হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর ভয়ে কেউ কিছু বলেন না। কারণ, শারুন চৌধুরীর সঙ্গে নুসরাত ও মুনিয়ার গভীর সম্পর্ক ছিল। মুনিয়ার ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল শারুনের। মুনিয়ার মৃত্যুর পর নুসরাতের দেহ ব্যবসার কাজ কিছু দিন বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হয়েছে।’
এদিকে নুসরাতের একজন কাজিন বলেন, ‘দেখুন আমাদের এটা নিয়ে খুবই লজ্জায় পড়তে হয়। নিজের আপন ভাই সবুজের সঙ্গেও নুসরাতের সম্পর্ক ভালো নেই কেন? সেটা খোঁজ নিয়ে একটু দেখুন। বিশেষ করে নুসরাতের লোভের কারণেই ছোট বোন মুনিয়াকে খারাপ পথে নামিয়েছে নুসরাত। মুনিয়াকে টাকার মেশিন হিসেবে কাজে লাগিয়েছে।’
এই নুসরাতের কারণেই মুনিয়া মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করছেন স্বজনরা। তারা বলেছেন, নুসরাত এবং হুইপপুত্র শারুনকে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসবে। এদের কারণেই অনেক নিরীহ মেয়েরা সমাজে প্রতারিত হয়ে দেহ ব্যবসায় জড়াচ্ছে।