নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে ঈদ উপহার (শাড়ি-লুঙ্গি) নিতে এসে মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ‘ঘুষি’ খাওয়া এনামুল হক কালু নামের সেই বৃদ্ধকে এবার মেয়র নিজেই চাল দিয়েছেন।
রোববার সকালে বসুরহাট পৌরসভা চত্বরে সেই বৃদ্ধের হাতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০ কেজি চাল তুলে দেন মেয়র কাদের মির্জা। তার পাশাপাশি আরও কয়েকজন দুস্থ-দরিদ্রকে নিজ হাতে ঈদ উপহারের চাল তুলে দেন তিনি।
এর আগে গত শুক্রবার সকালে ঈদ উপহারের ত্রাণ বিতরণ করেন কাদের মির্জা। সেই অনুষ্ঠানের ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বৃদ্ধ কালুকে একটি শাড়ি দেন মেয়র কাদের মির্জা, তিনি সেটা পরিবর্তন করতে চাইলে তাকে ঘুষি মেরে সরিয়ে দেন মেয়র। পরে ‘ঘুষি’ মারার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ হয়।
বসুরহাট পৌর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ এনামুল হক কালু পরে মেয়র অনুসারী কয়েকজনের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে মেয়র তাকে ঘুষি মারার কথাটি অস্বীকার করেন। ভিডিওতে কালু বলেন, সেদিন কাপড় দেয়ার সময় ঝামেলা করেছি দেখে মেয়র সাহেব (কাদের মির্জা) আমাকে হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। আমারে মারে নাই, কিচ্ছু করে নাই। তিনি (কাদের মির্জা) খুব ভালো মানুষ। গরিব মানুষকে তিনি সাহায্য করেন।
রোববার সকালে চাল নিতে এসে কালু বলেন, আজকে আবার এসেছি মেয়র সাহেবের কাছ থেকে চাল নেয়ার জন্য। নিজ থেকে এসেছি উনার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নাই। উনি সবসময় আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন।
শুক্রবারের সেই ভাইরাল ভিডিও সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে রাতে নিজের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- ‘প্রিয় দেশবাসী, বিধিনিষেধে জনজীবন অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকে আমার পৌরসভার নিম্নআয়ের অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে আসছি। আমি শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়, কবিরহাট, দাগনভূঞা, সোনাগাজী, সেনবাগসহ বিভিন্ন জনপদের অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে আসছি। কখনও কোনো মানুষ সাহায্যের জন্য এসে আমার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যায়নি।’
‘আজও আমার পৌরসভায় অসহায় মানুষদের এক হাজারের বেশি শাড়ি-লুঙ্গি, ৫০০ জনকে নগদ অর্থ ও প্রায় দুই হাজার জনের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। পৌরসভার ছোট আঙিনায় সহস্রাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে যাওয়ায় দ্রুততার সঙ্গে কাপড় বিতরণ করতে হচ্ছিল।
তাই যাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে তাদের দ্রুত চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়। তখন একজন মানুষ কাপড় পাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে থাকে এবং একাধিকবার বলার পরও মাস্ক না পরার কারণে তাকে দ্রুত হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তাকে আঘাত করা হয়নি। এ বিষয়ে তিনি কোনো আক্ষেপও করেননি।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জা। গত ডিসেম্বরে মেয়র নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলে আলোচনায় আসেন তিনি। স্থানীয় রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে দলীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধের ঘটনায় দুবার সংঘর্ষে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে অনেকে ঢাকার ট্রমা সেন্টার, পঙ্গু হাসপাতালে অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এসব ঘটনায় ৪০টির বেশি মামলাও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ মার্চ দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন কাদের মির্জা। পদত্যাগের ৪৫ দিনের মাথায় ১৬ মে তিনি দলে ফিরে আসেন।