ফেসবুক লাইভে এসে করজোড়ে মিনতি এক চিকিৎসকের

আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দুপুর দেড়টায় ফেসবুক লাইভে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণা মজুমদার রুপা। তিনি হাসপাতালে করোনা রোগীর ভয়াবহতা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে এবং অক্সিজেনের সাপ্লাই থাকার পরও রোগী সেই অক্সিজেন নিতে না পেরে কীভাবে মারা যাচ্ছে তার বর্ণনা দেন। একইসাথে তিনি মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য মিনতি জানিয়ে বলেন, দেশকে করোনামুক্ত করার দায়িত্ব শুধু সরকার ও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নয়, এ দায়িত্ব প্রত্যেকটা মানুষের! লাইভে অত্যন্ত মর্মাহত, হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা এবং সামনের দিনগুলো কেমন যাবে সেই বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন ৯২ জন রোগী দেখেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আগেও ডিউটি করেছি, কিন্তু রোগীদের অবস্থা এত শোচনীয় ছিল না। সবাই মৃত্যু যন্ত্রণায় ভুগছেন।

অক্সিজেনের অভাবে কত কষ্টে একজন মানুষ মারা যেতে পারে, সামনে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। অক্সিজেন সাপ্লাই থাকার পরও নিতে পারছে না। কারণ, তাদের ফুসফুস অক্সিজেন নেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

পিপিই পরা অবস্থায় লাইভ করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই পোশাকে আমরা ডিউটি করি। দম বন্ধ অবস্থায় এই পোশাক পরে ডিউটি করতে হয়। যেখানে ডিউটি করি সেখানে এসি নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক।

এই পোশাকে অক্সিজেন পাওয়া যায় না, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, অনেক কষ্ট, জীবনটা মনে হয় বের হয়ে যাচ্ছে। করোনার প্রথম থেকে আমরা যে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি, কোনও কিছুতেই সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ঈদের পরে করোনার ভয়াবহতা এমন করুণ পর্যায়ে পৌঁছাবে যে রোগীকে বিছানা দেওয়া সম্ভব হবে না। প্রত্যেককে অক্সিজেন দেওয়া আছে।

কারও সেচুরেশন ৬৫, কারও ৭৫। ইয়াং বয়সের সবচেয়ে বেশি। গর্ভবতী মায়েদের কষ্টও দেখেছি। করজোড়ে অনুরোধ, এটাকে কেবল সরকার বা ফ্রন্টলাইনারদের যুদ্ধ ভাববেন না, এটা সবার যুদ্ধ। করোনাযুদ্ধ কবে শেষ হবে জানি না।

আমি এতগুলো পজিটিভ রোগীর চিকিৎসা দিয়ে বাসায় যাবো, তখন আমি কী করে পরিবারের সদস্যদের কাছে যাবো। এই বাস্তবতা নিয়েই প্রত্যেক চিকিৎসক যার যার দায়িত্ব পালন করছেন।

এর শেষ কোথায়? শেষ তখনই হবে যখন আপনারা সচেতন হবেন। একবার একজন করোনা রোগীর সঙ্গে এসে দেখা করে যান। আমি প্রায় শ’খানেক রোগী আজকে দেখেছি। কোনও স্বজনের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। আপনারা এই জগৎ দেখেন নাই, কিন্তু কখনও দেখবেন না সেই গ্যারান্টি উপরওয়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারেন না। অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্তভাবে বলছি, একেকজনের কষ্ট সহ্য করার মতো না। সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু জানি না আজকের দিনটা বাঁচবেন কিনা।

অনুরোধ, যুদ্ধটাকে শুধু সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। আপনারা হাসপাতালে ভর্তি না হলেই আমরা খুশি। যে অবস্থা দেখছি, হাসপাতালে এসেও রোগী আগামীতে আর ভর্তি হতে পারবে কিনা বলা যাচ্ছে না।

About reviewbd

Check Also

কৌতুক অভিনেতা ‘ভাদাইমা’ আর নেই

‘ভাদাইমা’ খ্যাত কৌতুক অভিনেতা আহসান আলী (৫০) মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। রোববার (২২ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *