স্থান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। মা-ছেলে দুজনই করোনায় আক্রান্ত। পুরো পরিবার উদ্বেগে কাতর। দুজনের কারো অবস্থা ভালো নয়। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। দুজনেরই আইসিইউ প্রয়োজন। মায়ের শারীরিক অবস্থা আগে থেকে শোচনীয়। বৃদ্ধ মা আইসিইউতেই ছিলেন। এদিকে ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তারও আইসিইউর সেবা প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে আর আইসিইউ বেড খালি নেই। এমন পরিস্থিতিতেও বৃদ্ধ মা ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে দিলেন। আইসিইউ থেকে বের করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শ্বাসকষ্টে মা মারা গেলেন। বর্তমানে ছেলেটি মায়ের ছেড়ে দেওয়া সেই আইসিইউ বেডে চিকিৎসাধীন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলের অবস্থাও সংকটাপন্ন।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকেলের দিকে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বুধবার রাতে হাসপাতালের আইসিইউ বেডের ইনচার্জ ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে নগরের দিদার মার্কেট সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকার বাসিন্দা কানন প্রুভা পাল নামে ৬৭ বছর বয়সী এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। কয়েক দিন পর তার ছেলে শিমুল পালও (৪২) করোনায় আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হন।
এরই মধ্যে মা কানন প্রুভাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থা দিনদিন অবনতি হচ্ছিল। মঙ্গলবার শিমুলের শারীরিক অবস্থারও অবনতি হয়। তারও আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোথাও আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছিল না।
ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের আইসিইউ বেডে শুয়ে এমন খবর শুনে তার মা ইশারা করেন, তাকে বাদ দিয়ে যেন ছেলে শিমুলকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শেষে পরিবারের সবার সম্মতিতে চিকিৎসকরা মাকে বাদ দিয়ে ছেলে শিমুল পালকে আইসিইউ বেডে শিফট করান এবং মাকে আইসোলেশন বেডে নিয়ে যান। এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পরই বৃদ্ধ মা কানন প্রুভার মৃত্যু হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘সব কিছু জেনেও কিছুই করার নেই। মায়ের অবস্থাও খারাপ ছিল। তার পরও ছেলেকে যদি অন্য কোথাও আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া যেত, তাহলে মাকে আইসোলেশন বেডে নেওয়া লাগত না। বর্তমানে ছেলের অবস্থাও বেশি ভালো না।’
এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রধান ডা. আব্দুর রব জানান, বুধবার এই হাসপাতালে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বাবা ও ছেলে মারা গেছেন।