নার্সের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক মেডিকেল অফিসারকে। জানা গেছে সেই মেডিকেল অফিসারের নাম ডা. মো. জামাল হোসেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের শৃঙ্খলা শাখার সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই চিকিৎসককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
অভিযোগে জানা যায়, চিকিৎসক মো. জামাল হোসেন কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই হাসপাতালের তার অধীনস্ত এক নার্সের সাথে তিনি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ সম্পর্কের পথ থেকে স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে না পেরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন ডা. জামাল হোসেনের স্ত্রী ডা. ফারজানা আক্তার।
ডা. ফারজানা আক্তারের অভিযোগ থেকে জানা যায়, জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে ডা. জামাল হোসেনের সাথে ২০১৩ সালে তার বিবাহ হয়। দুজনেই চিকিৎসক হওয়ায় এবং তাদের কর্মস্থল বিভিন্ন জায়গায় হওয়ার সুযোগে ডা. জামাল হোসেন পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারই অধীনস্ত হোমনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ নার্স নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলার রাংগালঘাট গ্রামের কালাম মন্ডলের মেয়ে কনকচাপার সঙ্গে। এ নিয়ে ডা. জামাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী ডা. ফারজানাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন।
এ বিষয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ডা. ফারজানা চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর নিকট অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফেনীর তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইনকে (বর্তমানে কুমিল্লা সিভিল সার্জন) আহবায়ক করে এবং কুমিল্লা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাত হোসাইকে সদস্য ও ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুবাইয়াত বিন করিমকে সদস্য সচিব করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তদন্ত কমিটি গত বছরের ২৯ নভেম্বর ডা. জামাল হোসেন ও নার্স কনকচাপার তৎকালীন কর্মস্থল হোমনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনের কপি গণমাধ্যমের হাতে এসে পৌঁছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ডা. জামাল হোসেনের সাথে ওই নার্সের বিবাহ বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং উক্ত ঘটনাসহ এর আগের কয়েকটি নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের কথা তিনি (ডা. জামাল হোসেন) নিজেই তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত কমিটির উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ১৪ জুলাই ডা. জামাল হোসেনকে চাকুরী থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।
এ বিষয়ে শনিবার বিকালে ডা. জামাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আমার স্ত্রী ডা. ফারজানা আক্তারের অভিযোগ ও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাকে চাকুরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। কর্তৃপক্ষ আমার বিষয়টি বিবেচনা করে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেবে বলে আশা করি।