কারাগারে পৌঁছে অনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে হতেই রাত প্রায় দশটা। আ’লোচিত চিত্র নায়িকা পরীমনিকে রাখা হলো কাশিমপুর-৩ মহিলা কারাগারের রজনীগন্ধা গন্ধা ভবনের একটা একা সেলে। দরজা বলতে রড লাগানো একটা কপাট। বাইরে থেকে সব দেখা যায়। টয়লেট বলতে ওই সেলের এক কোণায় একটা হাফ দেয়াল ঘেরা জায়গা।
বাইরে থেকে দেখা যায় টয়লেটে কেউ আছে কিনা। পরীমনিকে জিজ্ঞেস করা হলো রাতে কি খাবেন। উত্তরে তিনি বললেন, আ’মেরিকান বার্গার আর ডায়েট কোক। এসব কারাগারে নেই। দিনের বেলায় কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে খাওয়া গেলেও সেখানে বাইরের ফাষ্টফুড নিষেধ। অগত্যা তিনি বিস্কুট দিয়েই রাতের খাবার সারলেন। পাশের একটা সেল থেকে এক বন্দী পাঠালেন লাল চা।
প্রায় সারারাতই পরীমনির সাথে আড্ডার প্রতিযোগীতায় ছিলেন নারী কারারক্ষীরা। একবার সিনিয়ার জে’ল সুপার আব্দুল জলিল এসেও দেখে গেছেন। পরীমনির ঘুমানোর জায়গা পাঁচটা কম্বলের বিছানা। তাও কম্বলগুলো পুরনো। বালিশ নেই। খুব মেজাজ খা’রাপ হলো নায়িকার। তিনি বললেন, এভাবে মানুষ থাকতে পারে? এক রসিক কারারক্ষী বললেন, সিনেমায় জে’লখানা দেখেছেন এতোকাল। এবার আসল জে’ল দেখেন।
রাত ১২ টার পর অস্থির পরীমনি চাইলেন সিগারেট। কিন্তু এতো রাতে সিগারেট পাবেন কোথায়। কারারক্ষীরাই তাকে জোগাড় করে দিলেন এক প্যাকেট বেনসন। সিগারেট টানতে টানতে পরীমনির প্রশ্ন, মোবাইল ফোন নেই এখানে? কারারক্ষী একটু বিব্রত।
তারপর তাকে কেউ একজন বললো, জে’লখানায় সিষ্টেম করে সবই পাওয়া যায়। শুধু মোবাইল ফোন কেনো, গাঁজা-ইয়া’বা সবই পাওয়া যায়। যদিও জে’লখানার ভাষায়, গাঁজার নাম বালিশ আর ইয়া’বার নাম বাবা। পরীমনি হেসে গড়াগড়ি। তিনি বললেন, কাল তাহলে আমা’র বালিশ আর বাবা লাগবে অনেকগুলো।
কারা সূত্রে জানা গেছে, পরীমনিকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার সুযোগ নেই। তিনি ভিআইপি, সিআইপি কিংবা সরকারী কর্মক’র্তা হলে এসব পেতেন। তাকে ডিভিশন পেতে হলে হাই’কোর্টে রিট করতে হবে। কিংবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। এসব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আপাতত তাকে ডিভিশন দেয়া হচ্ছেনা। তিনি একজন সাধারণ হাজতী বন্দীর মতোই থাকবেন।
সুবিধা হিসেবে একা একটা কক্ষে থাকবেন। তার নিরাপত্তার জন্যে নারী কারারক্ষী থাকবেন। যারা সার্বক্ষণিক নজরদারী করবেন। শনিবার সকালে পরীমনির জন্যে একজন নারী সেবিকা দেয়া হবে। সাধারণত সাজা’প্রাপ্ত বন্দীরা এই পদে কাজ করেন। ওই নারী সেবিকা পরীমনির জামাকাপড় পরিষ্কার ইত্যাদির মতো কাজ করবেন।
বর্তমানে করো’না পরিস্থিতিতে কারাগারে কড়াকড়ি অনেক থাকায় পরীমনির পক্ষে বাইরের খাবার খাওয়া অসম্ভব। যদি কারা কর্তৃপক্ষ তার জন্যে এসবের ব্যবস্থা করে দেন, বিশেষ ব্যবস্থায়, তাহলে তিনি বাইরের খাবার পাবেন। তা না হলে পরীমনি আপাতত কারাগারের ক্যান্টিন থেকেই খাবার কিনে খেতে হবে। কিংবা সরকারী খাবার খেতে হবে।