রাজশাহীর বিভিন্ন সড়কের পাশে গাছপালা ও বৃক্ষরাজির গায়ে টিনের প্লেটে হাদিসের বাণী ও কুরআনের আয়াত লিখে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে বিভিন্ন স্লোগানও। জামায়াত-শিবিরকর্মীরা রাতের আঁধারে গাছের ওপরের দিকে এমনভাবে টিনের প্লেটে লেখা এসব ধর্মীয় বাণী লাগিয়ে দিচ্ছেন। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে না পেরে তারা বিশেষ এ কর্মসূচি গ্রহণ করছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
আবার সড়কপথে চলতে গেলেই যেন এসব অক্ষর প্লেট সহজেই পথচলতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে একদল লোক এসব সড়কের দুই পাশের গাছগাছালিতে এসব টিনের প্লেট লাগাচ্ছেন পেরেক ঠুঁকে। মোটরসাইকেলে করে তারা ১০/১২ জন করে দলবেধে আসছেন আর ব্যাগ থেকে হাদীস কোরআনের বাণী লেখা প্লেটগুলো বের করে গাছের গায়ে সেঁটে দিচ্ছেন সমানে।
সঙ্গে দলীয় স্লোগান লেখা প্লেট লাগাচ্ছেন মাঝে মাঝে। রাজশাহী জেলাজুড়ে গত আগস্ট মাসে এসব প্লেট লাগাতে শুরু করে তারা। জেলাজুড়ে এই অভিনব কর্মসূচি চলছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী আরও বলেন, এলাকার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরাই এসব টিনের প্লেট গাছের গায়ে লাগাচ্ছেন। তারা দেখতে পেলেও ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে না পেরে তারা বিশেষ এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, মোহনপুর থানার মোড় থেকে তানোরমুখী ১৫ কিলোমিটার কাশিমবাজার সড়কের দুই পাশের হাজারখানেক গাছে এ ধরনের টিনের প্লেট লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে কুরআন হাদিসের বিভিন্ন বাণীসংবলিত লেখা প্লেট পথচারীদের সহজেই চোখে পড়ে। কালো টিনের ওপর কোনটিতে লেখা আছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কোনটিতে লেখা জাজাকাল্লাহু তা’আলা খাইরান, আস্তাগফিরুল্লাহ, কোনটিতে আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানআল্লাহ ইত্যাদি।
তবে টিনের এসব প্লেটের নিচে কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ নেই। একইভাবে মোহনপুর বাগমারা-ভবানীগঞ্জ ও কামারপাড়া বাগমারা হাটগাঙ্গোপাড়া সড়ক ছাড়াও দাউকান্দি বাগমারা ভবানীগঞ্জ, দুর্গাপুর তাহেরপুর, পুঠিয়ার বিভিন্ন স্থানের সড়কের পাশে গাছগুলোতে এসব প্লেট লাগানো হচ্ছে।
বাগমারার ভবানীগঞ্জের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, আব্দুল বারী কাজী নামে বাগমারার এক জামায়াত নেতা ও তার অনুসারী জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা ভবানীগঞ্জসহ আশপাশের সড়কে রাতের আঁধারে এসব প্লেট গাছে লাগাচ্ছেন। এসব দোয়া দরুজ ও কুরআন হাদিসের বাণী লেখা প্লেট সড়কের গাছে লাগানোর পেছনে অবশ্যই জামায়াতের বিশেষ কোনো সাংগঠনিক এজেন্ডা আছে। এটা স্থানীয়ভাবে কেউ করছেন তাও মনে হয় না। কারণ জামায়াতের লোকেরা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো কাজই করে না। কি উদ্দেশ্যে এসব প্লেট গাছে লাগানো হচ্ছে কেউ বলতে পারছেন না।
মোহনপুরের মৌগাছি গ্রামের দুরুল হোদা বলেন, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা হয়ে আছে সব এলাকাতেই। এখন তারা হাদিস কুরআনের এসব দোয়া ও বাণীসংবলিত প্লেট লাগিয়ে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। কারণ ধর্মীয় লেবাসের আড়ালে জামায়াতের সন্ত্রাস সহিংসতা মানুষ দেখেছেন। আর এ কারণে সংগঠনটির বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষের কাছে এখন আর নেই।
রাজশাহীর মোহনপুর থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান, এই ধরনের বিষয় তিনি লোকমুখে শুনে খোঁজ নিয়েছেন। তবে কারা এসব প্লেট গাছে লাগাচ্ছেন তা শনাক্ত করা যায়নি।
আরও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যদি বিশেষ কোনো সংগঠন এসব কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে করেন তা হলে সমস্যা। আর কেউ যদি নিতান্তই ধর্মীয় বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে করেন সেটি ভিন্ন বিষয়।