নিজেই চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হ”ত্যা করেন। হ”ত্যা”র পর নীরবে কেঁদেছিলেনও। এমনকি স্ত্রীর শেষ বিদায়ের সঙ্গী হলো স্বামীর চোখের জল। নয়ন ভেজা আঁখি নিয়েই স্ত্রীকে কবরে রাখেন। নিজে খু”ন করলেও দোষ চাপিয়েছেন স্ত্রীর প্রেমিকের ওপর। শুধু তাই নয়, প্রেমিক গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ আর গণমাধ্যমকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন পাষণ্ড স্বামী।
স্বামীর এত নাটকের পর অবশেষে পুলিশের তদন্তে রিজিয়া আক্তার রূপা হ”ত্যা”র ২৮ দিনের মাথায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ হ”ত্যা কাণ্ডে জড়িত রূপা আক্তারের স্বামী হায়দার আলী নিজেই। ৮ সেপ্টেম্বর এসব তথ্য জানায় পুলিশ।
শুধু পরিকল্পনা নয়, নিজেই ঠাণ্ডা মাথায় স্ত্রী রূপাকে খু”ন করেন হায়দার আলী। অবশেষে পুলিশের জালে আটকা পড়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙালহালিয়া এলাকায়।
জানা গেছে, রূপার প্রেমিক কাজল এ ঘটনায় জড়িত- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। রহস্য উদঘাটনে নেমে হ”ত্যা কাণ্ডের সঙ্গে কাজল জড়িত নয় বলে জানতে পারেন তদন্তে থাকা সংশ্লিষ্টরা। তবে ঘটনার পর রূপার স্বামী হায়দার আলীর অতিমাত্রায় শোক পুলিশকে ভাবিয়ে তোলে। একপর্যায়ে তার ওপর নজরদারি শুরু করা হয়।
অবশেষে হায়দার আলীর আচার-আচরণে রূপা হ;ত্যা;র রহস্যের কিনারা উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ। হায়দার নিজেই পরিকল্পিতভাবে রূপাকে গ;লা কে;টে হ”ত্যা করেন। এরপর লা”শ ফে;লে দেন নির্জন পাহাড়ের ঝোপে। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে রূপা হ”ত্যা”র ঘাতক স্বামী হায়দার আলীকে বুধবার গ্রেফতার করে বান্দরবান সদর থানা পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বান্দরবান সদর থানার এএসআই গোবিন্দ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রূপা হ”ত্যা”র দায় স্বীকার করেছেন হায়দার আলী। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে বান্দরবান জেলা আদালতে পাঠানো হয়েছিল। এরপর বান্দরবানের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
এএসআই গোবিন্দ আরো জানান, চাঞ্চল্যকর এ হ”ত্যা কাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে কী কারণে হায়দার আলী নিজের চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হ”ত্যা করেছেন তা জানা যায়নি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১ আগস্ট ধলিয়া মুসলিমপাড়ায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন রূপা। ৭ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় চাচির বাসায় যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হন। সন্ধ্যার পরও না ফেরায় সেই চাচির মুঠোফোনে কল করেন রূপার বাবা।
কিন্তু ওই বাড়িতে যাননি বলে জানান রূপার চাচি। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। একপর্যায়ে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কের গলাচিপা মুসলিমপাড়ার ঝোপে রূপার লাশ পড়ে আছে বলে স্বজনদের কাছে খবর আসে।
৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কের গলাচিপা মুসলিমপাড়া এলাকা থেকে রূপার গ”লাকা”টা লা”শ উদ্ধার করে পুলিশ। রূপা রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ধলিয়া মুসলিমপাড়ার নুরুল ইসলামের মেয়ে। প্রায় আট মাস আগে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন বড়খোলাপাড়া খন্থাকাটা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে হায়দার আলীর সঙ্গে রূপার বিয়ে হয়। তিনি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ ঘটনায় ৮ আগস্ট বান্দরবান সদর থানায় হ”ত্যা মামলা করেন রূপার বাবা নুরুল ইসলাম ও স্বামী হায়দার আলী। মামলায় আসামি করা হয় রূপার কথিত প্রেমিক রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ডাকবাংলা বৌদ্ধ বিহার পাড়ার রকির ছেলে মোহাম্মদ কাজল হোসেনকে।