আধুনিক শহুরে জীবনে ইউরিক এসিড বৃদ্ধির সমস্যা অনেকেরই দেখা যায়। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। একটু সচেতন হয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ইউরিক এসিড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক শরীরে ইউরিক এসিড বৃদ্ধিতে কী ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের শরীরে দুই ধরনের এমাইনো এসিডের প্রয়োজন পড়ে। একটি আবশ্যক (এসেনশিয়াল) এমাইনো এসিড। আরেকটি অনাবশ্যক (নন এসেনসিয়াল) এমাইনো এসিড। এই নন এসেনসিয়াল এমাইনো এসিডের মধ্যে একটি হলো পিউরিন। এই পিউরিন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পাওয়া যায়। কারণ শরীরে পিউরিন তৈরি হয়।
এ ছাড়া কিছু কিছু খাবার থেকেও আমরা পিউরিন নামক এমাইনো এসিড পেয়ে থাকি। কোষে থাকা এই পিউরিনের ভাঙনের ফলে ইউরিক এসিড তৈরি হয়। এই ইউরিক এসিড রক্তে চলে যায়। নারীর ক্ষেত্রে রক্তে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ২ দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৪ থেকে ৭ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল।
আমরা যদি দেহের চাহিদার থেকে বেশি পরিমাণে প্রোটিন খেয়ে থাকি বা খাবারে যদি এলকোহল জাতীয় খাবারের পরিমাণ বেশি থাকে, তা থেকে দেহে পিউরিন নামক নন এসেনসিয়াল এমাইনো এসিড তৈরি হয়। এই পিউরিনের শেষ উৎপাদন (এনডপ্রডাক্ট) হিসেবে ইউরিক এসিড তৈরি হয়।
এই ইউরিক এসিড প্রথমে রক্তে চলে যায়। সেখান থেকে কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। রক্তে যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায় এই অবস্থাকে বলা হয় হাইপারইউরিসেমিয়া। এই অতিরিক্ত ইউরিক এসিড সূক্ষ্ম স্ফটিক (ক্রিস্টাল) আকারে জয়েন্টের মধ্যে বিশেষ করে পায়ের আঙ্গুলে ব্যথা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া আমাদের দেহের শ্বেত কণিকা এই ইউরিক এসিড স্ফটিককে ফরেন বডি মনে করে আক্রমণ করে। ফলে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হয় বা ফুলে যায়। এই অবস্থাকে টোফেস বলে।
প্রথম অবস্থায় শুধু পায়ে ব্যথা হয়। আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পা ফোলা, হাঁটু ও হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয়। ফলে ইউরিক এসিড আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁটতেও সমস্যা হয়। হাইপারইউরিসেমিয়ার কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন : বাত, কিডনিতে পাথর, কিডনি অর্কাযকর হওয়া, উচ্চরক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
হাইপারইউরিসেমিয়া বা ইউরিক এসিডে যেসব খাবার পরিহার করতে হবে
১. অধিক চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবে না। যেমন : গরুর মাংস খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মহিষের মাংস ইত্যাদি। ২. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জাতীয় মাংস (অর্গান মিট) খাওয়া যাবে না। যেমন : লিভার, কলিজা, মগজ, জিহ্বা ইত্যাদি।
৩. খোসাযুক্ত প্রাণী পরিহার করতে হবে। যেমন : চিংড়ি মাছ, শামুক, কাকড়া। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। ৪. সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুটি, সিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
৫. কিছু কিছু শাকসবজি খাওয়া যাবে না। যেমন : পালং শাক,পুঁই শাক, ফুল কপি ব্রকোলি, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়শ , পাকা টমেটো ইত্যাদি। এছাড়া মাশরুমও খাওয়া যাবে না।
৬. এলকোহোল, ক্যাফেন জাতীয় বেভারেজ খাওয়া যাবে না। যেমন : চা, কফি, কোমল পানীয়, কারো ক্ষেত্রে চকোলেট খাওয়া যাবে না। ৭. মিষ্টি ফলে ফ্রুকটোস থাকে যা ইউরিক এসিড স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্ফটিককে বড় করে দেয়। তাই মিষ্টি ফল পরিহার করাই ভালো।
যেসব খাবারে বাধা নেই
১. চর্বিহীন মাংস খেতে হবে। যেমন : মুরগির মাংস। মাছ, কুসুম ছাড়া ডিম পরিমাণ মতো খাওয়া যাবে।
২. অধিক আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন : সবজি-শাক ইত্যাদি। এই আঁশ স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে মল আকারে বের হয়ে যায়। ৩. এন্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন : লেবু চা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (পেয়ারা, আমলকি, কমলা, মাল্টা), গ্রিন-টি ইত্যাদি খেতে হবে।
৪. এই সময় চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
কারা ইউরিক এসিডে বেশি আক্রান্ত হন
১. যাদের বংশে বাতের সমস্যা আছে তারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ২. যারা এলকোহল গ্রহণ করে। ৩. যারা প্রোটিন জাতীয় খাবার চাহিদার তুলনায় বেশি খেয়ে থাকে এবং শাক সবজি কম খায়।
৪. কিছু কিছু ওষুধ রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেমন : ডাই ইউরেটিক মেডিসিন। ৫. যাদের উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।
৬. যাদের ওজনাধিক্য রয়েছে তারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ৭. যারা পানি কম পান করে তাদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা আছে। ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে উল্লিখিত শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ইউরিক এসিড সমস্যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে যা করবেন
শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার সমস্যার সাথে আজকাল অনেকেই আমরা পরিচিত। কেননা শরীরে উচ্চ মাত্রার ইউরিক এসিডের উপস্থিতি কারণ হতে পারে গেঁটে বাত বা গিরায় গিরায় ব্যথার মত অসংখ্য স্বাস্থ্য সমস্যার। মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ স্বাভাবিক ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায়, তার চাইতে বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড যখন আমাদের যকৃত তৈরি করে তখনই রক্তে এর পরিমাণ মাত্রা ছাড়ায়। এছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় খাবার হতে উৎপন্ন ইউরিক এসিড রক্তে মিশে যায়, রক্তে বাহিত হয়ে তা কিডনিতে পৌঁছায় এবং কিডনি এই টক্সিক উপাদানকে বের করে দের শরীরের বাইরে।
তবে আজকাল আমাদের এমন খাবার খাওয়া অনেক বেশি পড়ে যা রক্তে বাড়িয়ে দেয় ইউরিক এসিড, এতটা বেশি যে কিডনি সেটা শরীর থেকে বের করতে পারে না এবং ক্রমশ আপনার শরীরের বাড়তে থাকে ইউরিক এসিডের উপস্থিতি। ফলে আপনি হয়ে পড়তে থাকেন অসুস্থ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু সহ বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হতে থাকে এবং তাতে অস্থিসন্ধি ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়।
উচ্চ মাত্রায় চিনি খাওয়াও হতে পারে ইউরিক এসিড বৃদ্ধির একটা বড় কারণ। দেহে উচ্চ মাত্রার ইউরিক এসিদের উপস্থিতির কারণে হতে পারে গেঁটে বাত, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ড্যামেজ হওয়া যাওয়া হতে শুরু করে আরও নানান রকমের অসুখ। কী করবেন? জেনে নিন শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ও ইউরিক এসিড শরীর থেকে বের করে দেয়ার একটি সহজ কৌশল। স্বাভাবিক অবস্থায় দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা হচ্ছে- পুরুষের ক্ষেত্রে: ৩.৪–৭.0mg/dL নারীর ক্ষেত্রে: ২.৪–৬.0 mg/dL এর চাইতে বেশি হলে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আর এই কাজে আপনাকে সহায়তা করবে খুবই সাধারণ একটি জিনিস, যার নাম অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। যে কোন সুপারশপে খুঁজলেই এই জিনিসটি পাবেন। বিদেশি পণ্য হলেও দাম খুব বেশি চড়া নয়। একদম বিশুদ্ধ ভিনেগার কিনুন, কোন রকম রঙ-ফ্লেভার-পানি মেশানো ভিনেগার কিনবেন না। ১ চা চামচ ভিনেগার নিন, এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে পান করে ফেলুন। দিনে এই কাজটি ২/৩ বার করুন নিয়মিত।
অরগানিক ও অপাস্তুরিত ভিনেগার হলেই সবচাইতে ভালো কাজ দেবে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার শরীর থেকে যে কোন দূষিত পদার্থ বের করে দিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশুদ্ধ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে থাকে ম্যালিক এসিড, যা ইউরিক এসিডের ক্রিস্টাল গুলোকে ভেঙে দেয় এবং তাঁদেরকে শরীরের জয়েন্টে জমতে বাঁধা দেয়। এছাড়াও নিয়মিত এই পদ্ধতিতে সেবন করলে আপনি আরও কিছু চমৎকার স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।
ইউরিক এসিডের সাতকাহন
ইউরিক এসিড হচ্ছে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বনের হেটারোসাইক্লিক যৌগিক পদার্থ। এটি মানবদেহের অ্যান্ড কম্পাউন্ড, যা কিডনি দ্বারা ফিল্টারেট হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়। যদি কোনো কারণে এই ইউরিক এসিড তৈরির প্রক্রিয়ায় গোলমাল হয় বা কিডনি দ্বারা কম বের হয় তখন রক্তে এর মাত্রা বেড়ে যায়।
বেশকিছু কারণে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডাইইউরেটিক, এ্যালকোহল, অবিসিটি বা ওজনাধিক্য, কিডনির সমস্যা, হাইপোথাইরয়েডিজম, সোরিয়াসিস বা পাঁচড়া জাতীয় চর্মরোগ, জেনেটিকস, টিউমার, লাইসিস সিন্ড্রোম, ইমিউন সাপ্রেসিং ড্রাগস, নায়াসিন বা ভিটামিন বি-৩, অতিরিক্ত পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার ইত্যাদি।
রক্তের ইউরিক এসিডের ৩ ভাগের ২ ভাগ আসে দেহের পিউরিন নামক পদার্থ ভেঙ্গে এবং ১ ভাগ আসে খাবার থেকে। খাবারে থাকা পিউরিন এবং প্রোটিন ডিগ্রেডেশন শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই বাড়তি ইউরিক এসিড শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তে ইউরিক এসিড অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে হাইপার ইউরেসিমিয়া বলে।
তখন বাড়তি ইউরিক এসিড জয়েন্ট বা গিড়ায় ক্রিস্টাল সৃষ্টি করে, গিড়ায় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় এবং লাল হয়ে ফুলে যায়, জ্বালাপোড়া করে। এই অবস্থাকে গাউট বা গেঁটে বাত বলে। শুরুতে গাউটে একটিমাত্র গিরা বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল আক্রান্ত হয়। এ ছাড়াও ইউরিক এসিডের কারণে আর্থ্রাইটিস, জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস, মেটাবলিক এসিডোসিস, কিডনি স্টোনও হতে পারে।
চিকিৎসকের কাছে গিয়ে টেস্ট করিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করা যেমন জরুরি ঠিক তেমনি একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে সঠিক ডায়েট। ডায়েটের মাধ্যমে খুব সহজেই রক্তের ইউরিক এসিডের মাত্রা কমিয়ে ফেলা যায়। কারণ, খাবারে পিউরিনের মাত্রা বা পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে ইউরিক এসিডের মাত্রা অনেক গুণ বেড়ে যায়। ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিক করতে কিছু খাদ্য খাদ্য তালিকা থেকে বর্জন করা উচিত।
যে খাবারে ইউরিক এসিড বেশি থাকে
১. সামুদ্রিক মাছ, গরু ও খাসির মাংস, হাঁস বা ভেড়ার মাংস, কলিজা, মগজ, ফুসফুস, গুর্দা, মাশরুম, মুরগির চামড়া, চিংড়ি, কাঁকড়া, শুঁটকি, ইলিশ মাছ, মাংসের স্যুপ, পায়া, মাছের কাঁটা, মাছের ডিম।
২. মসুর ডাল, মাষকলাই ডাল, মটর, চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, তিল, সিমের বীচি।
৩. পুঁই শাক, পালং শাক, মুলা শাক, পাট শাক।
৪. মুলা, ঢ়েঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, বীচি জাতীয় খাবার, মিষ্টি আলু, ওলকপি, বিট, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সজনে, সিম, বরবটি, কাঁঠালের বীচি, সিমের বীচি, বেগুন।
৫. সব ডাল, বাদাম ও বাদাম জাতীয় খাদ্য, লবণ যুক্ত খাদ্য, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার, হাঁসের ডিম, কফি, আচার, ইস্ট বা ইস্টের তৈরি যে কোনো খাবার, পনির।
পানি: অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করতে ভুলবেন না। পানি আপনার শরীরের ইউরিক এসিডকে ইউরিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে ফেলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে।
সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি ‘থেরাপিউটিক ফুড’ ইউরিক এসিডকে কমিয়ে দিতে ভালো কাজ করে
১ গ্লাস লাউয়ের জুস, ১ চামচ মৌরির গুঁড়া, ২/৩টি গোল মরিচের গুঁড়া ভালোভাবে মিক্স করে সকালবেলার নাশতার সময় খেতে পারেন। উপকারিতা- এতে ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’ আছে, যা ডিটক্সিফিকেশন হিসেবে কাজ করে বডির ইউরিক এসিডকে কমিয়ে দেয়।
২০০ মিলি পানির সঙ্গে ২ চা চামচ মেথি রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে পানি ছেঁকে নিয়ে মেথিগুলো পেস্ট বানিয়ে সেই ২০০ মিলি পানির সঙ্গে জ্বাল করে ফুটাতে হবে। এই পানীয় সকালের নাশতা খাবার ১০-১৫ মিনিট আগে খেতে হবে। উপকারিতা- আয়রন খুব বেশি থাকে এবং ব্যথা দূর করে।
১ চামচ মধুর সঙ্গে ১ চামচ কালো জিরার তেল মিক্সড করে ১০-১৫ দিন খেতে পারেন। উপকারিতা- ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকারী।
দৈনিক কাঁচা রসুন খেতে পারেন ৫/৬টি কোয়া। উপকারিতা- ব্যথা দূর করতে কার্যকারী।
সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমে গেলে ২ মাস পর আবার রক্তের ইউরিক এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করুন। ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিক হলেও সহসাই আবার বাদকৃত খাবারগুলাকে খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না, ধীরে ধীরে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে স্বাভাবিক খাদ্য তালিকায় ফিরে যেতে হবে। রক্তে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে অবশ্যই সঠিক ডায়েট ঠিক করে ফেলুন যা খুব সহজেই ব্যথামুক্ত এবং অতিশিগগির সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করবে।
গেঁটে বাত ও ইউরিক এসিড
রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি হলে গেঁটে বাত হতে পারে। কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। তা এতটা বেশি যে, কিডনি থেকে বের করতে পারে না এবং ক্রমেই শরীরে এর উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এটি বেড়ে গেলে হাঁটুসহ বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ইউরিক এসিড জমা হতে থাকে। তাতে অস্থিসন্ধি ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। মূত্রের মাধ্যমে যে পরিমাণ স্বাভাবিক ইউরিক এসিড বেরিয়ে যায়, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ যখন শরীর তৈরি করে তখনই সমস্যা দেখা দেয়। একটু সচেতন হয়ে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ইউরিক এসিড অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
এই সমস্যায় যেসব খাবার পরিহার করা উচিত সেগুলোহলো বেশি চর্বিযুক্ত মাংস। যেমন- গরু, খাসি, ভেড়ার ও মহিষের মাংস, কলিজা, মগজ, মাছের ডিম, চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ডিমের কুসুম। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। কিছু কিছু শাকসবজি যেমন- পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, ঢেঁড়স, পাকা টমেটো খাবেন না। অ্যালকোহল, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়, চা, কফি, কোমল পানীয় পরিহার করা ভালো। তবে চর্বিহীন মাংস যেমন- ছোট মুরগির মাংস, মাছ, কুসুম ছাড়া ডিম পরিমাণ মতো খাওয়া যাবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন- সবজি, শাক ইত্যাদি খেতে পারেন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার যেমন লেবু-চা, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল যেমন- পেয়ারা, আমলকী, কমলা খেতে পারেন। বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন, ভালো খাকুন।