পার্থিব জীবনের ভালো কাজের জন্য থাকবে পুরস্কার এবং মন্দের জন্য থাকবে শাস্তি। আর আল্লাহর প্রতি ঈমানের প্রতিদান হিসেবে পরকালে থাকবে চিরস্থায়ী জান্নাতের জীবন কিংবা ঈমান না আনার কারণে চিরস্থায়ী জাহান্নামের জীবন। জান্নাতে প্রবেশে সৃষ্টজীবের মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকবে। জান্নাতে প্রবেশ করে তাদের অবস্থা কেমন হবে তারও বর্ণনা রাসুল (সা.) আমাদের জানিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল বর্ণের হবে। তার পরের দলটি হবে আকাশের সবচেয়ে বেশি আলোসম্পন্ন তারকার মতো।… তাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ও বিদ্বেষ থাকবে না। সবার অন্তর একজন ব্যক্তির অন্তরের মতো হবে। সবাই সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৪)
জান্নাতের দরজায় প্রথম টোকা দেবেন যিনি : এই নয়নাভিরাম জান্নাতে সর্বপ্রথম কে প্রবেশ করবেন? এ বিষয়ে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় টোকা দেব।’ অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘আমি জান্নাতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। তখন দারোয়ান বলবে, কে তুমি? আমি বলব, মুহাম্মদ। তখন সে বলবে, হ্যাঁ, আপনার ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন আপনার আগে কারো জন্য জান্নাতের দরজা না খুলি।’ (মুসলিম)
প্রথম যে উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে : প্রিয় নবী (সা.) শুধু নিজেই প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন না, বরং সঙ্গে নিজের উম্মতকেও নেবেন। পৃথিবীতে রাসুল (সা.)-এর উম্মত সর্বশেষ হলেও তারাই সবার আগে জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবে। এটি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুনিয়ায় সব শেষে এসেও আমরাই অগ্রণী হব। মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম আমরাই জান্নাতে প্রবেশ করব। অন্যরা আমাদের আগে কিতাব পেয়েছে আর আমরা সবার পরে কিতাব পেয়েছি।’ (বুখারি, মুসলিম ও নাসায়ি)
প্রথম যে সাহাবি জান্নাতে প্রবেশ করবেন : উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন আবু বকর (রা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘জিবরাইল এসে আমার হাত ধরে জান্নাতের দরজা দেখাল, যে দরজা দিয়ে আমার উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ তখন আবু বকর (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমিও আপনার সঙ্গে থাকব, যেন জান্নাতের দরজা দেখতে পারি।’ তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আবু বকর, শুনে রাখো, আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৫২)
জান্নাতে নারীদের সর্দার : বিভিন্ন হাদিসে জান্নাতে নারীদের নেত্রী কারা হবেন, তাঁদের বর্ণনা এসেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতের নারীদের সর্দার হবে মারিয়াম বিনতে ইমরান, ফাতেমা, খাদিজা ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।’ (তাবরানি, হাদিস : ৪১৫/১১) আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) জমিনে চারটি রেখা টানেন। অতঃপর বলেন, তোমরা কি জানো, এগুলো কী? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তিনি বলেন, ‘জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বোত্তম নারী হলো খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.), ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ (রা.), মারিয়াম বিনতে ইমরান ও আসিয়া বিনতে মাজাহিম।’ (মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ২৯০৩)
দরিদ্র মুহাজিররা আগে জান্নাতে যাবেন : দরিদ্র মুহাজিররা ধনীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন আমি মসজিদে বসে ছিলাম। দরিদ্র মুহাজিরদের একটি দলও মসজিদে বসা ছিল। এমন সময় রাসুল (সা.) এসে বললেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা! সুসংবাদ গ্রহণ করো। তাদের চেহারা উজ্জ্বল হোক। কারণ তারা ধনীদের চেয়ে ৪০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি দেখলাম, তাঁদের মুখের রং বদলে উজ্জ্বল হয়ে গেল। আমারও আশা জাগল, আমি যদি তাঁদের মাঝে হতাম! (দারেমি, হাদিস : ২৭২১)