ফাঁ”সির আগে গরুর কলিজা আর ইলিশ মাছ খাওয়ার ইচ্ছা ছিল দণ্ডিত আজিজ ও মিন্টুর। ইচ্ছা ছিল গ্রিল-নান রুটি আর মুরগির মাংস, দই-মিষ্টি খাওয়ারও। ফাঁ;সি কার্যকরের আগে তাদের শেষ ইচ্ছা পূরণ করল কারা কর্তৃপক্ষ। দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাও পূরণ হলো আলোচিত দুই ধ;র্ষ;কের।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে সোমবার রাত পৌনে ১১টায় প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর পাঁচ মিনিট পর আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁ;সি কার্যকর করা হয়। মঙ্গলবার সকালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুরে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, চুয়াডাঙ্গার আলোচিত ধ”র্ষ”ণ ও হ”ত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের ফাঁ;সি কার্যকরের জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নেই। শনিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে শেষবারের মতো স্বজনরা তাদের সঙ্গে দেখা করেন। দুই পরিবারের অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে দেখা করাই ছিল তাদের দুজনের শেষ ইচ্ছা।
এছাড়া তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শনিবার গরুর কলিজা ও ইলিশ মাছ খাওয়ানো হয়। রোববার গ্রিল ও নান রুটি আর সোমবার মুরগির মাংস, দই আর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।
এদিকে, দুই খুনির ফাঁ;সি কার্যকর করার জন্য কারাগারের নিরাপত্তায় সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়। কারাগারে দায়িত্বে ছিলেন ১৩ জন অস্ত্রধারী কারারক্ষী। এছাড়া পুলিশ ও র্যাবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন কারাগারের প্রধান ফটকে।
কারাসূত্রে জানা গেছে, দুই খুনির ফাঁ;সি কার্যকরে রাতে একে একে কারাগারে ঢোকেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, সিভিল সার্জন দিলীপ শেখ আবু শাহীন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান। রাতে ফাঁ;সির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম। রাতেই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়।
এরপর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁ;সির মঞ্চে নেয়া হয়। সোমবার রাত পৌনে ১১টায় প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর পাঁচ মিনিট পর একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁ;সি কার্যকর করা হয়।
ফাঁ;সি কার্যকরে জল্লাদ কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন, আজিজুর রহমান ও কাদের অংশ নেন। ফাঁ;সি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিম তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নুর নেতৃত্বে মিন্টু ও আজিজুলের পরিবারের সাতজন সদস্য তাদের মরদেহ নিতে কারাগারে আসেন।
এ সময় তাদের দুজনের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স সঙ্গে ছিল। ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজ সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। মরদেহ রাতেই বাড়িতে পৌঁছানোর সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার বাতাস। পরে সকাল ৬টায় দাফন সম্পন্ন করা হয়।
২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার জোড়গাছা গ্রামের কামেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হ;ত্যা করা হয়। হ;ত্যার আগে তাদের দুজনকে ধ;র্ষ;ণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই দুই নারীর গলা কাটা হয়। এ ঘটনায় পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় হ;ত্যা মামলা করেন নিহত এক নারীর মেয়ে। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আজিজ ও মিন্টুসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন- একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় আসামি মহি মারা যান।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই এ মামলায় সুজন, আজিজ ও কালুকে মৃত্যুদণ্ড দেয় চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে বেকসুর খালাস দেন।
২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন। পরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আজিজ ও কালু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান। কিন্তু তা নামঞ্জুর হয়।