কুমিল্লার নানুয়াদিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপে সেদিন রাতে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে মাজার মসজিদে এসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ইকবাল হোসেন। পরদিন ভোরে পূজামণ্ডপের পরিস্থিতি দেখতে যান। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে আবার ফিরে আসেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আবার মণ্ডপে গিয়ে ভাঙচুরে অংশ নেন।
একপর্যায়ে পরিস্থিতি খারাপ দেখে ট্রেনযোগে কুমিল্লা থেকে কক্সবাজারে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছেন ইকবাল। দুই দফা ১২ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে ইন্ধনদাতাদের তথ্য দিয়েছেন ইকবাল।
মঙ্গলবার (০২ নভেম্বর) রিমান্ডের শেষ দিনে সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ইকবালসহ মামলার চার আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হবে কিনা তা জানায়নি সিআইডি। তবে বুধবার (০৩ নভেম্বর) তাদের আদালতে তোলা হবে।
ঘটনার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ইকবালকে শনাক্ত করা হয়। পরিবার তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন দাবি করলেও মঙ্গলবার কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ইকবাল হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন নয়, সম্পূর্ণ সুস্থ এবং খুবই চতুর।
খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ইকবাল পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার আগে পুরো এলাকা রেকি করে। এরপর দারোগাবাড়ি মাজার মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে মণ্ডপে রাখে। আত্মগোপনে চলে যাওয়ার জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম, পরে কক্সবাজার চলে যায়।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, ইকবালসহ চার আসামির দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘটনার ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে ইকবাল। তার বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে ইন্ধনদাতাদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে সিআইডি। এ ছাড়া ১২ দিনে ইকবালসহ চার আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় ধর্ম অবমাননা, হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি, সদর দক্ষিণ, দাউদকান্দি ও দেবিদ্বার থানায় ১২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ইকবালের ধর্ম অবমাননা মামলাসহ পাঁচটি তদন্ত করছে সিআইডি।
অন্য মামলাগুলো হলো কোতোয়ালি থানায় পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফেসবুকে লাইভ করা ফয়েজের একটি, কোতোয়ালি ও সদর দক্ষিণ থানায় মন্দির ভাঙচুরে পুলিশের করা দুটি এবং সর্বশেষ ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার সাজ্জাদ ও ফয়সাল নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সিআইডির করা একটি মামলা। এই পাঁচ মামলায় ইকবালসহ এ পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।