অভিশপ্ত গ্রাম, ৪০০ বছরে জন্ম নেয়নি একটি শিশুও

পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে নতুন প্রাণ, নতুন প্রজন্মই ভরসা। তবে সেই প্রক্রিয়ায় বাধা পড়লে সময়ের আগেই ধ্বংস হতে পারে।

বহু দেশ এবং জাতি যখন জন্মহার কমাতে উসগ্রীব তখনই তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একসময় হারিয়ে গিয়েছে ইতিহাসের গভীরতলে। এর অন্যতম উদাহরণ বর্তমানে চীনের অবস্থা।

বহু দশক ধরে কঠোরভাবে ‘এক সন্তান নীতি’ অনুসরণের পর ২০১৬ সালে চীন তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জানায় সব দম্পতি দুটি সন্তান নিতে পারবেন। কিন্তু এরপরেও চীনে জন্মহার স্থায়ীভাবে বাড়েনি। ফলে বর্তমানে বিয়ের জন্য পাত্র পাচ্ছে না পাত্রী। পাত্রী পাচ্ছে না পাত্র। অন্যদিকে সেখানকার মানুষ সন্তান নিতেও চাচ্ছেন না নিজে থেকেই। মূলত দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলেই নির্ঝঞ্ঝাট জীবন উপভোগ করতে চান।

তবে ভারতের মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামের চিত্র একই হলে কারণটা ভিন্ন। তারপরও রীতি মানতে গিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছেন তারা। শিরোনাম পড়েই ভয়ংকর কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন নিশ্চয়। তবে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এমন এক সংকেত যা মানব জাতির বিকাশকে স্তব্ধ করে রেখেছে। একটি গ্রামে যেখানে এত লোক বাস করে সেখানে প্রতিটি পরিবারেই অন্তত একটি করে শিশু থাকার কথা। তবে সেই গ্রামে অন্তত ৪০০ বছর ধরে কোনো শিশুর কলকাকলি শুনতে পাওয়া যায়নি।

ভারতে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে অদ্ভুত প্রথা রয়েছে যা বাস্তবে ভয়ঙ্কর এবং সমাজ বিরুদ্ধ। ভারতের মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামটির নাম শঙ্ক শ্যাম জি। গ্রামে কোনো সন্তানের জন্ম হতে দেয়া হয় না। সন্তানসম্ভবা সব নারীই এই রীতিই মেনে আসছেন ৪০০ বছর ধরে। বিষয়টা হচ্ছে গ্রামের নারীরা মা হতে পারবেন ঠিকই কিন্তু সন্তান প্রসব করতে হবে গ্রামের সীমানার বাইরে।সেখানেই তার যাবতীয় যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বর্তমানে এই গ্রামে হাসপাতাল থাকলেও আগে যখন গ্রামের বাইরে সন্তান প্রসব করানো হতো সেই সময় হাসপাতালের প্রচলন ছিল না। তবে তখনো এই রীতিই মেনে চলত গ্রামের নারীরা। কিন্তু কেন নারীদের প্রতি কঠোর নিয়ম সেখানে পালিত হয়? গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা বলেন যে ষোড়শ শতক থেকেই সেখানে তারা এই নিয়ম মেনে চলেছেন। গ্রামবাসীরা মনে করেন এই গ্রামে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ রয়েছে। তাই গ্রামের সীমানার মধ্যে কোনো শিশু জন্ম নিলে হয় সেই শিশুটির কোনো শারীরিক ক্ষতি হবে আর নইলে শিশুটির মায়ের মৃত্যু হবে। শিশুটি বিকলাঙ্গ হয়েও জন্ম নিতে পারে।

এই বিশ্বাস গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আসে যখন, গ্রামে ষোড়শ শতকে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেসময় সেই মন্দিরের কাছাকাছি এক নারী গম ভাঙতে শুরু করেন। সেই শব্দে ক্ষুব্ধ হন স্বয়ং ঈশ্বর। তারপর থেকেই সন্তান সংক্রান্ত সেই অভিশাপে অভিশপ্ত এই গ্রাম। অভিশাপ ছিল এটাই যে সেই গ্রামে আর কোনো নারী সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না।

অনেকেই এই প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে ফল পেয়েছেন এমনটাই বলছেন বাসিন্দারা। সেক্ষেত্রে হয় মৃত সন্তান প্রসব করেছেন কিংবা প্রসব করতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তবে অভিশাপের পাশাপাশি গ্রামে একটি আশীর্বাদ রয়েছে। গ্রামে কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের নেশায় আসক্ত নন। ফলে অন্য সমস্ত গ্রামে যে কারণে বেশিরভাগ পরিবারের মধ্যে ঝামেলা এবং মনোমালিন্য হয় এখানে তেমন কিছুই হয় না। ফলে গ্রামে সর্বদা শান্তি বজায় রাখতে পেরেছেন বাসিন্দারা।

About reviewbd

Check Also

লতা-পাতা নয়, চা-সিগারেট খাচ্ছে ছাগল, ভাইরাল ভিডিও

প্রায় ৩০০ প্রজাতিরও বেশি ছাগল রয়েছে। এটা গৃহপালিত প্রাচীনতম প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে একটি, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *