মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলের ঘটনা। কালের কণ্ঠের সহসম্পাদক আতাউর রহমান কাবুল পল্টন থেকে কলাবাগান যেতে ট্রান্সসিলভা বাসে উঠলেন। বাস কন্ডাক্টর ভাড়া নিলেন বিশ টাকা। সম্প্রতি বাস ভাড়া নতুনভাবে নির্ধারিত হয়েছে তবুও বেশি ভাড়া মনে হওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করলেন। কিন্তু কন্ডাক্টরের গোয়ার্তুমির কারণে কোনো লাভ হলো না। বাসের অন্য যাত্রীরাও তেমন প্রতিবাদ করলেন না।
এরপর সামনের চেকারকে অভিযোগ করলে তিনি বললেন, ‘বাসে লাগানো চার্টে ভাড়া যা লেখা আছে সেভাবেই দেবেন।’ তিনি এও দেখলেন, চেকার সাহেব বাস কন্ডাক্টরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে নেমে গেলেন।
আতাউর রহমান কাবুল দেখলেন, চার্টে পল্টন থেকে কলাবাগান পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা করে লেখা। সে হিসেবে তার কাছ থেকে ১০ টাকাই নেওয়ার কথা। কিন্তু ডাবল টাকা কেন নেওয়া হলো আবারও কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞাসা করলেন। কন্ডাক্টর কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না, টাকাও ফেরত দিলেন না। বরং এভাবে সব বাসযাত্রীর কাছ থেকে ইচ্ছে মতো ভাড়া নিলেন। বাস কন্ডাক্টরের বক্তব্য, ‘এটা মালিক জানেন, আমি সামান্য চাকরি করি মাত্র।’
এরপর আতাউর রহমান কাবুল ৯৯৯-এ ফোন দিলেন। ট্রিপল নাইন থেকে ওই বাসের লোকেশন জানতে চাওয়া হলে জানালেন, বাসটি হাইকোর্ট ক্রস করছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহবাগে পৌঁছাবে। গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৬৮৩। ট্রিপল নাইন থেকে শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসারের নম্বর দেওয়া হলো এসএমএস করে। এরপর কাবুল ডিউটি অফিসারকে ফোন দিয়ে অভিযোগটি জানালেন। ডিউটি অফিসার পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে শাহবাগে বাসটিকে আটক করলেন।
শাহবাগ থানা পুলিশের এসআই রয়েল জিয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের ফোর্স বাসটিকে থামিয়ে চালক এবং কন্ডাক্টরকে নামালেন। তিনিও গাড়ি থেকে নেমে পুলিশকে বিস্তারিত জানালেন। খবর পেয়ে সেখানে এলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট শামীম। পুলিশ সদস্যরা অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকেও অভিযোগের সত্যতা পেলেন। এরপর ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস কাগজ নিয়ে তাৎক্ষণিক মামলা করে জরিমানা করলেন ৬ হাজার টাকা। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেল, ট্রান্সসিলভা পরিবহনের এই গাড়িটির এটা দ্বিতীয় মামলা। আগে তিন হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছিলেন অন্য মামলায়। এজন্য এখন ডাবল জরিমানা হলো।
আতাউর রহমান কাবুল ঘটনাটির বিস্তারিত জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন এটা রীতিমতো অরাজকতা! আমরা সাধারণ পাবলিক ডিজেলের দাম বাড়ার পর বাসের নতুন ভাড়া সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত। তারপরও কোন হিসেবে বাস কন্ডাক্টররা যাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে? এসব কি দেখার কেউ নেই? কাউকে না কাউকে তো প্রতিবাদ করা উচিত। এজন্যই আমি প্রতিবাদ করেছি।’
ধন্যবাদ ৯৯৯-কে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। পুলিশের এই হটলাইন আসলেই একটা দারুণ সার্ভিস। ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট পুলিশ ভাইদেরকে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে পৌঁছে এরকম একটি অন্যায় কাজে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার জন্য।
আসুন, আমরা সবাই এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। মনে রাখবেন, আপনার হাতে থাকা সেলফোনটিই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার একটি বড় অস্ত্র। আর এভাবে প্রতিবাদ করলেই আমাদের সমাজ থেকে অনিয়ম আর অন্যায় নির্মূল হবে, নচেৎ নয়।