খালার বিয়েতে পরতে হবে নতুন জামা। আর এ জামা কিনতেই ভয়ংকর পরিকল্পনা। শুরুটা টাকার জন্য অ’প’হ’র’ণ করলেও শেষে চালানো হয়েছিল নৃশংস হ’ত্যা’য’জ্ঞ। হ’ত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, হাত-পা বেঁধে স্টিলের বাক্সে রাখা হয়েছিল চার বছর বয়সী মেয়েটির লা’শ। ভয়ংকর এ পরিকল্পনা দুই কিশোরের। তবে ক্রাইম পেট্রোল দেখেই চালানো হয়েছিল এ হ’ত্যা’য’জ্ঞ।
ঘটনাটি বগুড়ার গাবতলীর। বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের সাজু প্রামাণিকের বাড়িতে রাখা স্টিলের বাক্স থেকে শিশুটির হাত-পা বাঁ’ধা লা’শ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের নাম সানজিদা খাতুন। শিশুটি লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে। নৃশংস এ হ’ত্যা’ কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই কিশোরকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলো- উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ১৫ বছর বয়সী ছেলে রিয়াদ ও সাজু প্রামাণিকের ১৪ বছরের ছেলে শুভ। এর মধ্যে রিয়াদ নবম শ্রেণির ও শুভ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল জানান, সানজিদাকে অ’প’হ’র’ণের পর হ’ত্যার কথা স্বীকার করেছে রিয়াদ ও শুভ। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুভ জানিয়েছে, তার খালার বিয়ে উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য সানজিদাকে অ’প’হ’র’ণের পর মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে তারা।
ওসি বলেন, রিয়াদ ও শুভ নিয়মিত ভারতীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলের (সনি আট) ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখতো। এ অনুষ্ঠান দেখে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অ’প’হ’র’ণের কৌশল রপ্ত করে।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার সকালে বাড়ির উঠানে খেলছিল সানজিদা। তবে সকাল ১০টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না মেলায় পুকুর বা ডোবার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে ধারণা করেন স্বজনরা। এ জন্য ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ও ডোবায় তল্লাশি চালিয়ে ফিরে যান। এরপর ওইদিন দুপুরে স্থানীয় এক নারীর মোবাইল ফোনে কল করে সানজিদাকে অ’প’হ’র’ণের কথা জানানো হয়। তাকে পেতে হলে মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দিতে হবে বলেও জানানো হয়।
এরপর বিষয়টি নিখোঁজ সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিককে জানান ওই নারী। পরে সেই মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন সানজিদার বাবা। তার কাছেও মেয়েকে ফিরে পেতে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। তবে কয়েকবার কথা বলার পর অ’প’হ’র’ণ’কা’রীরা টাকার অংক কমিয়ে ৫০ হাজার দাবি করে। এছাড়া বুধবার রাত ৭টার মধ্যে টাকা নিয়ে গ্রামের একটি কালভার্টের নিচে রেখে আসতে বলে। পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্যও হুঁশিয়ার করা হয়।
পুরো ঘটনাটি গাবতলী থানায় জানায় সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক। নির্ধারিত সময়ের আগেই অপহরণকারীদের নির্ধারণ করা সেই কালভার্টের অদূরে ওত পেতে থাকে পুলিশ। এরপর রাত ৭টার দিকে এক ব্যক্তিকে ওই কালভার্টের কাছে আলো দিয়ে কিছু খুঁজতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন পুলিশ ও সানজিদার স্বজনরা।
পরে তার মুখ দেখে চিনতে পারে একই গ্রামের প্রবাসী উজ্জ্বলের ছেলে রিয়াদ। তার দেওয়া তথ্যমতে রাত ১১টার দিকে একই গ্রামে সাজুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে সানজিদার হাত-পা বাঁ’ধা লা’শ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই পাশের কদমতলী গ্রামে নানার বাড়ি থেকে রিয়াদের সহযোগী শুভকেও গ্রেফতার করা হয়।
গাবতলী মডেল থানার ওসি জিয়া লতিফুল বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থানায় একটি মামলা করেন নিহত সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক। গ্রেফতার দুই কিশোরকে আদালতে পাঠানো হবে।