নেত্রকোণার একটি বাসা থেকে বাবা ও ছেলের লাশ উদ্ধারের পর মৃত্যুর বিষয় নিয়ে একটি মেইলে পাওয়া গেছে। রবিবার সকালে ওই মেইলটি পুলিশের হাতে এসেছে। মৃত্যুর আগে আবদুল কাইয়ুম সরদার (৩২) তার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ই-মেইলে চিঠিটি লিখে যান। গত বুধবার রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে লেখা মেইলটিতে তিনি নিজেকে অসহায় উল্লেখ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার কথা লিখেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শহরের নাগড়া এলাকার একটি ভবনের চারতলা বাসা থেকে পুলিশ আবদুল কাইয়ুম সরদার ও তার দুই বছরের ছেলে আহনাব শাকিলের লাশ উদ্ধার করে।
আবদুল কাইয়ুম সরদারের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার গোপালের খামার গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আক্কাস সরদারের ছেলে। তিনি নেত্রকোণায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করতেন। এদিকে মৃত্যুর ঘটনায় আবদুল কাইয়ুমের ছোটভাই মোস্তাফিজুর রহমান (২৫) বাদী হয়ে গত শুক্রবার দুপুরে নেত্রকোণা মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে আবদুল কাইয়ুমের স্ত্রী সালমা খাতুনকে (২১) গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিনই সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় গৃহবধূ সালমা খাতুনকে (২১) দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আবদুল কাইয়ুম সরদার ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ফকিরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আসাদ আলীর মেয়ে ছালমা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে কাইয়ুম সরদার স্ত্রীকে নিয়ে তার কর্মস্থল নেত্রকোণায় বসবাস করছিলেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে তাদের ছেলের জন্ম হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কাইয়ুম ও তার দুই বছরের শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে।
পরে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক শ্রদ্ধানন্দ নাথ জানিয়েছিলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুই বছরের ওই শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে শিশুটির বাবার মৃত্যুর বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় দুজনেরই ভিসারা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সাথে উভয়ের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। আবদুল কাইয়ুমের স্ত্রী সালমা খাতুন ঘটনার পর জানিয়েছিলেন, প্রতিদিনের মতো গত বুধবার রাতে খাবার খেয়ে ১টার দিকে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় জেগে উঠে পাশের কক্ষে একটি ফ্যানের সাথে স্বামী ও সন্তানের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন।
নেত্রকোণা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, মৃত্যুর আগে কাইয়ুম তার অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুর রশিদের কাছে রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে একটি মেইল লেখেন। তাতে তিনি আর্থিক ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন। চিঠির এক স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন শহরের একটি সোনার দোকানে গহনার জন্য ৩০ হাজার টাকা বায়না দেয়া ছিল। সেই টাকা আনেন একটি দোকানে শিশুর খাবার নেয়ায় বাকি পড়া ছয় হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করার জন্য। ওসি জানান, তারা বিভিন্ন বিষয় তদন্ত করছেন।