প্রচলিত ধারণা এই যে, আবহাওয়া অস্থিসন্ধির ব্যথা বা বাতের ব্যথায় প্রভাব ফেলে। যাঁদের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা আছে, তাঁরা বলেন, ঠান্ডায় বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ব্যথা বাড়ে। কিন্তু কেউ কি গবেষণা করে এর সত্যতা পেয়েছেন?
বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিকস অ্যান্ড স্পোর্টস মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক স্কট টেলফার এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মিডিয়া ল্যাবের গবেষক নিক অব্রাডোভিস।
তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫টি জনবহুল শহরের বিভিন্ন ব্যথায় আক্রান্ত বাসিন্দারা ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ায় কোন ধরনের তথ্য ইন্টারনেটে খোঁজেন, তা জানার চেষ্টা করেছেন এবং তার ভিত্তিতে কোন আবহাওয়ায় কোন ব্যথার প্রকোপ বাড়ে, তা বলার চেষ্টা করেছেন। গবেষণাটি ৯ আগস্ট উন্মুক্ত অনলাইন সাময়িকী প্লাস ওয়ানে প্রকাশিত হয়।
এই গবেষণা প্রবন্ধ ও আবহাওয়ার সঙ্গে অস্থিসন্ধি ও বাতের ব্যথা প্রসঙ্গে কথা হয় বিশিষ্ট বাতরোগ বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেখা গেছে, অস্থিসন্ধি ও বাতের ব্যথা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় বাড়ে। শীতকালে বা আর্দ্র আবহাওয়ায় বাড়ে। শুষ্ক আবহাওয়ায় কমে। অস্থিসন্ধিতে ব্যথার একটি কারণ সম্ভবত রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া। কিন্তু এর সঙ্গে আবহাওয়ার কী সম্পর্ক, তা গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি বা প্রমাণ হয়নি।
আবহাওয়ার সঙ্গে হাঁটু, কোমর ও বাতের ব্যথার কী সম্পর্ক?
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক দুজন বিভিন্ন শহরের স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে ইন্টারনেটে হাঁটুর ব্যথা, কোমরের ব্যথা ও বাতের ব্যথার তথ্য খোঁজার প্রবণতা পরীক্ষা করে দেখেছেন। শহরগুলোর পাঁচ বছরের তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এর সঙ্গে ইন্টারনেটে নাগরিকদের ব্যথার তথ্য খোঁজার প্রবণতার তুলনা করেছেন।
তাতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে কোমরের ব্যথার তথ্য খোঁজার সূচক ১২ পয়েন্ট এবং হাঁটুর ব্যথার তথ্য খোঁজার সূচক ১৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিপাত বেশি হলে কোমর ও হাঁটুর ব্যথার তথ্য মানুষ কম খোঁজে। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির ওপরে গেলে মানুষ বাতের ব্যথার তথ্য বেশি খোঁজে।
গবেষকেরা বলছেন, অনলাইনে রোগ সম্পর্কে তথ্য খোঁজার অভ্যাসের সঙ্গে জনগোষ্ঠীতে রোগের ধরনের সম্পর্ক আছে। সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, কোন তাপমাত্রায় মানুষ কোন ব্যথা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, যুক্তরাষ্ট্রের এই গবেষণায় তা দেখার চেষ্টা হয়েছে।