মানসিক চাপ দূর করতে এবার ‘গরু থেরাপি’ !

সুইজারল্যান্ডে তীব্র মানসিক চাপ থেকে চাপ মুক্ত করবে এই ‘গরু’। এই দেশে পাবেন গরুর সান্নিধ্যে থেকে মানসিক চাপ দূর করার থেরাপি। আশ্চর্য এই থেরাপির নাম ‘কাউ কাডলিং থেরাপি’।

জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের ছোট্ট শহর টেনিনক্যানে বাস করে সিবিল ইয়ুগার্টের পরিবার। পারিবারিক ভাবেই তারা গরু প্রতিপালন ও দুগ্ধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ২০১৪ সালে তাদের খামারে প্রায় একই সময়ে তিনটি গাভী তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। কিন্তু কিছু দিন যেতেই সিবিল ইয়ুগার্টের বাবা বুঝতে পারলেন তিনটির কোনোটাই তাদের দুগ্ধ ব্যবসার জন্য উপকারি নয়। তিনি খুব হতাশ হলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তিনটি বাচ্চাই কসাই খানায় বিক্রি করে দেবেন।

কিন্তু বাবার এই এই পরিকল্পনায় বাদ সাধেন সিবিল। তিনি গরু তিনটিকে রেখে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সিবিলের অনুরোধে তার বাবা গরু তিনটিকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তিনি শর্ত জুড়ে দেন যে সিবিলকেই গরু তিনটির দেখাশোনা করতে হবে।

বাবার শর্ত মেনে নিয়ে সিবিল দিনের অধিকাংশ সময় গরু তিনটির দেখাশোনা শুরু করেন। কিন্তু দিন যতই যায় সিবিলের কপালে চিন্তার ভাজ পড়তে শুরু করে। তিনি ভাবতে থাকেন এই বাড়ন্ত গরুর খাদ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় মেটাতে কি করা যায় সেটি নিয়ে।

ভাবতে ভাবতে সিবিলের মাথায় এক দারুণ বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি একটি ক্যাটেল থিমড অ্যাডভেঞ্চার পার্ক করার পরিকল্পনা করেন। যে সমস্ত বাচ্চারা কখনো গ্রামীণ জীবনের ছোঁয়া পাইনি তারা সেখানে বেড়াতে আসবে, গরুর সঙ্গে সময় কাটাবে, তারা শিখবে কীভাবে দুধ উৎপাদন হয়, কীভাবে খামারে গবাদি পশু প্রতিপালিত হয় ইত্যাদি।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। তিনি গরুগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করলেন, যেন গরুগুলো আরো বেশি নিরীহ ও মিশুক হয় এবং বাচ্চাদের কোনো ধরনের ক্ষতি না করে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ শেষে তিনি পার্কটি সাত বছরের বেশি বয়সি বাচ্চাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। একজন বাচ্চা ৫ সুইস ফ্রা দিয়ে গরুগুলোর সঙ্গে সারাদিন কাটানোর সময় পায়। এভাবেই সিবিলের ক্যাটেল থিমড অ্যাডভেঞ্চার পার্কের শুরু।

এভাবেই চলে কিছু দিন। কয়েক দিন যাওয়ার পর সিবিল লক্ষ্য করলেন, তার পার্কে আসা বাচ্চারা যখন পার্কে আসে তখন যেরকম নিস্তেজ থাকে ফিরে যাবার সময় তারা গরুগুলোর সান্নিধ্যে কাটানোর প্রভাবে অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

সিবিল তার এই পর্যবেক্ষণ থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন এই পদ্ধতি তিনি পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ওপর প্রয়োগ করবেন। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তিনি সফল হলেন। তিনি দেখলেন বয়স্করা গরুর সান্নিধ্যে সময় কাটানোর ফলে তাদের মানসিক চাপ দূর করে অনেক বেশি চনমনে হয়েউঠছেন।

বর্তমানে ক্যাটেল থিমড অ্যাডভেঞ্চার পার্ক থেকে সিবিল বেশ মোটা অংকের টাকা আয় করেন। দু’ঘণ্টার একটি কাউ কাডলিং সেশনের জন্য একজন বয়স্ক আগ্রহীকে মানুষকে গুনতে হয় ৫০ সুইস ফ্রা। ফলে সিবিল ইয়ুগার্ট ও তার পরিবার যে গরু নিয়ে চিন্তিত ছিল সেই গরু নিয়েই এখন রীতিমতো গর্ব করছেন।

About reviewbd

Check Also

লতা-পাতা নয়, চা-সিগারেট খাচ্ছে ছাগল, ভাইরাল ভিডিও

প্রায় ৩০০ প্রজাতিরও বেশি ছাগল রয়েছে। এটা গৃহপালিত প্রাচীনতম প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে একটি, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *