ঘুমানোর সময় দুর্ভাগ্যবশত কানের ভেতর ছোট আকৃতির তেলাপোকা অর্থাৎ তেলাপোকার বাচ্চা ঢুকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
সঙ্গে সঙ্গে যদি কানের ভেতর থেকে তেলাপোকা বের করা যায় তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু দেরী হলে বড় ধরনের অস্বস্তিকর ঘটনার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। সাম্প্রতিক এ ধরনের একটি ঘটনা জেনে নিন।
২৯ বছর বয়সি নারী কেটি হোলি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মেলবোর্ন শহরের বাসিন্দা। কানের মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে এক মাঝরাতে তার ঘুম ভাঙে। ‘সেলফ’ ম্যাগাজিনে পাবলিশ হওয়া এক লেখায় তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল আমার কানের মধ্যে কেউ যেন এক টুকরো ঠাণ্ডা বরফ ঢুকিয়ে রেখেছিল।’ প্রাথমিক অবস্থায় তার স্বামী চিমটি দিয়ে কানের মধ্যে ঢুকে যাওয়া কিছু একটা বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সেটা বের করতে সক্ষম হলেন না। দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে, পরীক্ষা করে চিকিৎসক তাদের সন্দেহকে সত্যি বলে নিশ্চিত করেন।
হ্যাঁ! ঘুমন্ত অবস্থায় তার কানের মধ্যে তেলাপোকা ঢুকে গিয়েছিল। তার কানের মধ্য থেকে তেলাপোকাটি বের করার জন্য চিকিৎসক প্রথমে পোকাটিকে লেডোকাইন নামক একটি ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেন এবং পরবর্তীতে পোকাটিকে সেখান থেকে বের করে আনেন।
কিন্তু তার কিছুদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও কেটি তার কানের মধ্যে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন এবং পাশাপাশি তার শুনতেও বেশ সমস্যা হচ্ছিল। এভাবে প্রায় নয়দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরে যখন তিনি আবার চিকিৎসকের কাছে যান তখন জানতে পারেন, তেলাপোকাটির দেহের কিছু অবশিষ্ট অংশ এখনো তার কানের মধ্যে রয়ে গেছে। পূর্ববর্তী চিকিৎসকরা পোকাটিকে পুরোপুরি বের করতে সক্ষম হননি।
এই ঘটনাটি পড়তে যদি আপনি খুবই অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে এই অনুভূতির ক্ষেত্রে আপনি একদমই একা নন।
‘সেলফ’ ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলা কিছু চিকিৎসকের মতে, দুর্ভাগ্যবশত কানের মধ্যে পোকা ঢুকে যাওয়ার ঘটনা প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটতে থাকে। যদিও এ নিয়ে ইদানীং কালের মধ্যে কোনো গবেষণাধর্মী আর্টিকেল নেই তবে একটি ছোট গবেষণার কথা জানতে পারা যায়, যেটা প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৬ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার একটি মেডিক্যাল জার্নালে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অবস্থিত টাইগারবার্গ হাসপাতালে প্রতি দুই বছরে গড়ে ২৩ জনের কান থেকে পোকা বের করা হয়েছিল। সেই পোকাগুলোর মধ্যে ছিল ৩টি গুবরে পোকা, ৮টি মাছি ও ১০টা তেলাপোকা।
এমনকি ২০১৪ সালে, তাইওয়ানে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক দেখতে পান, একজন মহিলার কানের মধ্যে মাছি ডিম পর্যন্ত পেড়েছিল। একজন ৪৮ বছর বয়স্ক মহিলার সঙ্গে এমন ঘটনাটি ঘটে। সেই মহিলাটি কানের মধ্যে তীব্র ব্যথা অনুভব করার কারণে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন। ২০১২ সালে তাইওয়ানে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটে, একজন ব্যক্তির কানের মধ্যে প্রায় দুই মাস ধরে অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছিল। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা তার কানের মধ্যে ক্ষুদ্র বেশ কিছু কীট বিশেষ পান এবং সেগুলো তার কানের মধ্য থেকে বের করে নিয়ে আসেন।
২০১৬ সালে প্রকাশিত এক মেডিক্যাল জার্নালে প্রায়শও ঘটতে থাকা এই সমস্যার একটি বৈজ্ঞানিক নামকরণের সম্পর্কে ঘোষণা আসে। মেডিক্যালের ভাষায় এই সমস্যাকে ‘ওটোয়াক্রাইসিস’ নামে নামকরণ করা হয়েছিল।
আপনি যদি অনুভব করেন যে, আপনার কানের মধ্যে কোনো ধরনের পোকা ঢুকে গিয়েছে তাহলে ব্যাপারটি হালকা ভাবে নিবেন না একদমই। তাৎক্ষণিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। জরুরি অবস্থায় কানের মধ্যে অলিভ অয়েল অথবা নিরাপদ পানি দিয়ে ঘাড় কাত করে কানকে উর্ধ্বমুখী করে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার কানের মধ্যে থাকা পোকাটির শ্বাস নিতে কষ্ট হবে এবং পোকাটি কান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। তবে আপনি তাৎক্ষণিক অবস্থায় যদি পোকাটিকে বের করতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তারপরেও আপনি চিকিৎসকের কাছে একবার যাবেন। কে জানে, কেটি’র সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনাটির মতো পোকার অংশ বিশেষ কানের মধ্যে থেকেও যেতে পারে!
তথ্যসূত্র : লাইভ সায়েন্স