লবঙ্গ মসলা হিসেবে সকলের পরিচিত। লবঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম সিজিজিওমোরোমেটাম। লবঙ্গ গাছের ফুলের কুড়িকে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। লবঙ্গকে লং বলেও ডাকা হয়। লবঙ্গের সুগন্ধের মূল কারণ ‘ইউজেনল’ নামের যৌগ। এটি লবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত তেলের মূল উপাদান, এবং এই তেলের প্রায় ৭২-৯০% অংশ জুড়ে ইউজেনল বিদ্যমান। এই যৌগটির জীবাণু’না’শক এবং বেদনা না’শক গুণ রয়েছে।
লবঙ্গের তেলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অ্যাসিটাইল ইউজেনল, বেটা-ক্যারোফাইলিন, ভ্যানিলিন, ক্র্যাটেগলিকঅ্যাসিড, ট্যানিন, গ্যালোট্যানিক অ্যাসিড, মিথাইল স্যালিসাইলেট, ফ্ল্যাভানয়েড, ইউজেনিন, র্যা ম্নেটিন, ইউজেনটিন, ট্রি-টেরপেনয়েড, ক্লিনোলিক অ্যাসিড, স্টিগ্মাস্টেরল, সেস্কুইটার্পিন।
১০০ গ্রাম লবঙ্গে ৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম টোটাললিপিড, ২ গ্রাম সুগার, ২৭৪ কিলো-ক্যালোরি শক্তি ও ৩৩ গ্রাম ডায়েটারিফাইবার থাকে।খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক –কমবেশি সবই আছে। আর ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি-৬, বি-১২, সি, এ, ই, ডি, কে, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফোলেট রয়েছে। এই সব যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে।
লবঙ্গের গুণাগুণ শুধু রান্নাতেই নয়, তার বাইরেও আছে। সুস্বাস্থ্যে জন্য লবঙ্গ নানা ভাবে আমাদের উপকারে আসে। গবেষণায় বারবার প্রমাণিত, রোগ নিরাময়ে লবঙ্গের যথেষ্ট কার্যকারিতা রয়েছে।লবঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ থাকায় মস্তিষ্কের বিভিন্ন কাজকর্ম সুষ্ঠু রাখতে ও হা’ড় শক্ত করতে এই উপাদান খুব জরুরি। ম্যাঙ্গানিজের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হল লবঙ্গ। লবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যা ফ্রি র্যাডিকলস কমাতে সাহায্য করে। লবঙ্গের একটি উপাদান হল ইউজেনল, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
প্রত্যেক দিন ব্যক্তির রাতে ঘুমানোর আগে ১টি লবঙ্গ ও ১ গ্লাস গরম পানি পান করলে বিভিন্ন ধরনের রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সহজেই। লবঙ্গ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। যেমন- গ্যাস, বমিভাব এবং বদহজমের মতো অনেক সমস্যায় লবঙ্গ খুব উপকারী। এছাড়াও লবঙ্গ প্রতিদিন খেলে গলায় সংক্রমণ হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বুকের জমে থাকা কফ বের হয়ে যায়। হজম, পিত্ত’বি’না’শ’কারী, হাঁ’পানি, জ্ব’র, বদহজম, কলেরা, মাথা’ব্যথা, হাঁচি এবং কাশির মতো রোগেও এটি বিশেষ উপকারী।
লবঙ্গের আর একটি উপাদান হল নাইজেরিসিন। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই উপাদানের জন্যই রক্ত থেকে শর্করা বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেওয়া, ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলির কার্যক্ষমতা বাড়ানো ও ইনসুলিন নিঃসৃত হওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর মতো কাজ ভালো ভাবে হয়। তাই মধ্য মাত্রার ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে লবঙ্গ ভালো কাজে দেয়। লো-বোন মাস এমন একটি অবস্থা, যা বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, লবঙ্গের উপাদান হাড়ের জোর ও বোন ডেনসিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
দাঁতের ব্যথা কমায়। লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা দূর করে। মাড়ির ক্ষয় নিরাময় করে। লবঙ্গতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু বিক্রিয়া করে যে নিমেষে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়। প্রায় সব টুথপেস্টের কমন উপকরণ এই লবঙ্গ।
বমি বমি ভাব দূর করে লবঙ্গ। ট্রেনে বা বাসে যাওয়ার সময় যদি মাথা ঘুরতে থাকে ও বমি এসে যায়, তাহলে মুখে একটি লবঙ্গ রেখে সেই রস চুষলে বমি ভাব ও মাথা ঘোরা কমে যাবে। গর্ভবতী মায়েরা সকালের বমিবমি ভাব দূর করতে লবঙ্গ চুষতে পারেন। লবঙ্গের সুগণ্ধ বমিবমি ভাবদূর করে।
লবঙ্গ সর্দি–কাশি ও ঠাণ্ডা লাগা কমায়। সর্দিকাশির মহৌষধ হিসেবে লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ চিবিয়ে রস গিলে খেলে বা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে সর্দি, কফ, ঠাণ্ডা লাগা, অ্যাজমা, গলা’ফুলে ওঠা, র’ক্ত পি’ত্ত আর শ্বাস ক’ষ্টে সুফল পাওয়া যায়।মাথা ব্যথা ও মাথা যন্ত্রণা কমায়: ধোঁয়া, রোদ এবং ঠান্ডার জন্য শ্লেষ্মা বেড়ে নানা ধরনের মাথা ব্যথা বা মাথার রোগ দেখা দিতে পারে। মাথা ব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম।
লবঙ্গ কামো’দ্দী’পক ও যৌ’ন রোগে উপকারি। লবঙ্গ কা’মো’দ্দীপক। এর সুবাস অবসাদ দূর করে, শরীর ও মনের ক্লা’ন্তি ঝরিয়ে দেয়। যৌ’ন শক্তি বৃদ্ধি করে।প্রচণ্ড স্ট্রেস ও উৎকণ্ঠা কমায়। এক টুকরো লবঙ্গ মুখে ফেলে চুষে চুষে খেয়ে ফেলুন। পান করতে পারেন লবঙ্গের চাও। মেজাজ ফুরফুরে হয়ে উঠবে।
র’ক্ত পরিশোধন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষ’তিকর উপাদানগুলো সরিয়ে রক্তকে পরিশোধন করতে ভূমিকা রাখে। র’ক্ত’কে পরিস্কার করে।লবঙ্গ হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হজমে সহায়তা করে এমন এনজাইমনিঃসরণের মাধ্যমে এবং অ্যাসিড ক্ষরণের মাধ্যমে লবঙ্গ আমাদের হজম ক্ষমতা সক্রিয় করে তোলে। এরাফ্লাটুলেন্স, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ডিসপেপসিয়া এবং নসিয়া কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের র’ক্ত প্রবাহেরও উন্নতি ঘটায়।
ডায়াবেটিস রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে লবঙ্গ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, লং এর রস শরীরের ভিতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা কমায়। লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আর্থ্রাইটিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, জয়েন্টপেইন কমানোর পাশাপাশি পেশির ব্য’থা, হাঁটুতে, পিঠে বা হা’ড়ের ব্যথা এবং ফো’লা ভাব কমাতেও এই ঘরোয়া ঔষধটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।ক্যানসার প্রতিরোধ করে লবঙ্গ। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধ করে থাকে।