মুনিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা!


রাজধানীর গুলশানের আলোচিত মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধা;রের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। গুলশানের ওই বাসার মূল গেইটে থাকা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজের প্রতিটি সেকেন্ড বিশ্লেষণ করছি। ফুটেজে অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। মাম;লার তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণে এগুলো কাজে লাগবে।’

গত ২৬ এপ্রিল গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন বাদি হয়ে গুলশান থানায়

প্ররোচ;নার অভি;যোগ এনে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে।

ঘটনার দিন বের হয়নি মুনিয়া তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাসার সামনের গেটের সিসিটিভি ফুটেজে তারা ঘটনার আগের দিন রাতে স্বাভাবিকভাবেই মুনিয়াকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে দেখেন। তবে ঘটনার দিন মুনিয়া বাসা থেকে বের হয়নি।

বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে সর্বশেষ ২০ এপ্রিল বিকালে ওই অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করতে এবং বের হয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কর্মকর্তারা ফুটেজের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করতে চাননি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়াও মুনিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়ে তার সঙ্গে সায়েম সোবহান আনভীরের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। ঠিক কী কারণে তাদের মধ্যে ‘ঝামেলা’ হয়েছিল এবং ভিকটিমকে মোবাইলে ফোনে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে কী ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।

এ ছাড়া মুনিয়ার ব্যবহৃত ছয়টি ডায়েরিতে সায়েম সোবহান আনভীরকে উদ্দেশ্য করে লেখা অভিমান ও হতাশার কথাগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মামলার এজাহারে মুনিয়ার বড় বোন অভিযোগ করেছেন, বসুন্ধরার এমডির সঙ্গে তার বোন মুনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

গুলশানের বাসাটি তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে মাসিক এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া হলেও এর ভাড়া পরিশোধ করতেন আনভীর। ফেসবুকে একটি ছবি আপলোড করাকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান আনভীর তার বোনের

(মুনিয়া) ওপর ক্ষুব্ধ হয়। আনভীরের প্ররোচনায় তার বোন নিজের জীবন শেষ করেছে বলে তিনি মামলায় অভিযোগ করেন।

এদিকে গুলশানের যে বাসায় থাকতেন মোসারাত জাহান মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটটি কে ভাড়া নিয়েছিলেন? কার তথ্য দেওয়া ছিল ‘ভাড়াটিয়া ফর্মে? অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়ার ভাড়াটিয়া ফর্মে তথ্য ছিল মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত ও তার স্বামীর।

তাদের দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি ওই ফর্মের সঙ্গে গেঁথে দেওয়া হয়েছিল। আগাম ভাড়াও পরিশোধ করেছিলেন তারা। শনিবার বিকালে মুঠোফোন আলাপে নুসরাত নিজেও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন।

তবে তিনি দাবি করেছেন, বাসা ভাড়া নিতে মুনিয়াকে ‘সাহায্য করতে’ তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারাও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্ল্যাট ভাড়ার দুই মাসের অগ্রিম দুই লাখ টাকা ‘মুনিয়ার ব্যাংক হিসাব’ থেকে তুলে এনেছিলেন মুনিয়া ও তার বোন নুসরাত। ভাড়া নেওয়ার জন্য নুসরাত বাড়ির মালিকপক্ষকে জানান, তিনি (নুসরাত), তার স্বামী ও ছোট্ট বোনকে (মুনিয়া) নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকবেন।

নুসরাত জানান, বাড়িভাড়ার জন্য যে টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে এই টাকা দেওয়ার অবস্থা তাদের নেই। মুনিয়ার ব্যাংক হিসাবে লাখ লাখ টাকা কোথা থেকে এলো, সেই উৎস কি তারা জানতেন? জবাবে নুসরাত দাবি করেন, তিনি এর কিছুই জানতেন না।

বাসাটি তিনি ভাড়া করে দিয়েছিলেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘আমি ভাড়া করে দিইনি বা নিইনি। আমি বাসা ভাড়া নিবো কেন? মুনিয়া আমাকে ও আমার হাজবেন্ডকে বাড়িভাড়া নেবার সময় থাকতে বাধ্য করেছিল। বলেছিল আমাকে বাসাটা নিতে হেল্প করো।

তাই আমরা ওর (মুনিয়া) সঙ্গে ছিলাম। এসময় আমার ও আমার হাজবেন্ডের ভোটার আইডি কার্ড ভাড়াটিয়া ফর্মের সঙ্গে দিয়েছিলাম। তবে আমরা ওই ফর্মে তখন সই করিনি। ভাড়ার টাকা আপনি নিজের ব্যাগ থেকে দিয়েছিলেন?

এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাকা তো আমার কাছে থাকতেই পারে। হ্যাঁ, আমি দিয়েছিলাম। ও অগ্রিম বাসা ভাড়া দেবার জন্য যখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছিল, তখন আমাকে টাকাগুলো দিয়েছিল। মুনিয়া ‘হ্যান্ডপার্স নিয়েছিল। সেখানে তো এতগুলো টাকা রাখার জায়গা হয় না।

তাই, আমাকে সেই টাকাগুলো দিয়েছিল। আর এই টাকা মুনিয়ার ব্যাংক হিসাব থেকে ক্যাশ করা হয়েছিল। সেগুলো তার একাউন্টে রাখা হয়েছিল।তবে সেগুলো কিসের টাকা বা কোথা থেকে এসেছে তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।

বাসা ভাড়া ঠিক করা সময় উপস্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, নুসরাত ফ্ল্যাট মালিককে জানিয়েছিল তিনি, তার স্বামী মিজানুর রহমান সানি ও ছোট্ট বোন মুনিয়াকে নিয়ে থাকবেন। এই শর্তেই তাদেরকে ফ্লাট ভাড়া দেওয়া হয়।

About reviewbd

Check Also

কৌতুক অভিনেতা ‘ভাদাইমা’ আর নেই

‘ভাদাইমা’ খ্যাত কৌতুক অভিনেতা আহসান আলী (৫০) মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন)। রোববার (২২ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *