চীনের লং মার্চ ৫বি রকেটটির টুকরো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে এ সপ্তাহের কোনো এক সময় সেটি পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে। ঠিক কখন এবং পৃথিবীর কোন অংশে সেটি আছড়ে পড়বে বিজ্ঞানীরা সেটি এখনই বলতে পারছেন না
তবে এটি আছড়ে পড়ার এক ঘণ্টা আগে কোথায় পড়ছে তা জানাতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, রকেটের ধ্বংসাবশেষ আগামী ১০ মে বা তার ২/১ দিন আগে-পরে পৃথিবীতে পড়তে পারে। আছড়ে পড়ার কেবলমাত্র ঘণ্টাখানেক আগে বিজ্ঞানীরা হয়তো সেটি ঠিক কোথায় পড়তে যাচ্ছে সেটি চিহ্নিত করতে পারবেন।
গত ২৯ এপ্রিল ‘লং মার্চ ৫বি’ নামের রকেটটি চীনের হাইনান দ্বীপ থেকে তিয়ানহে মডিউল নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তিয়ানহে মডিউল চীনের নির্মাণাধীন স্থায়ী মহাকাশ স্টেশনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্টেশনটির তিন ক্রুর বসবাসের কোয়ার্টার এই মডিউলটিতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
বিবিসি বলছে, মহাকাশে এই রকেটের ধবংসাবশেষ এখন পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে এবং এটি বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে ঢুকছে। যার মানে হল, এটি পৃথিবীর চারিদিকে বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে নিচের দিকে নেমে আসছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ধ্বংসাবশেষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে সেটিকে গোলার আঘাতে ধ্বংস করে নিচে নামিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন বলেছেন, আমরা আশা করছি যে এটি এমন জায়গায় ধসে পড়বে যেখানে কারও কোনো ক্ষতি হবে না। আশা করি সমুদ্র বা এমন কোথাও পড়বে।
তিনি পরোক্ষভাবে চীনের সমালোচনা করে বলেন, যেকোনো পরিকল্পনা এবং অভিযান পরিচালনার সময় এই ধরণের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়াটা বেশ জরুরি।
এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গত কয়েকদিন ধরে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে, এই রকেটের ধ্বংসাবশেষ জনবহুল অঞ্চলে বিধ্বস্ত হতে পারে আবার আন্তর্জাতিক জলসীমাতেও পড়তে পারে। মহাকাশ বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিংয়ের বরাত দিয়ে গ্লোবাল টাইমস বলেছে, চীনের স্পেস মনিটরিং নেটওয়ার্ক এ বিষয়ে নিবিড়ভাবে নজর রাখবে এবং কোথাও কোনো ক্ষতি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্থ অবজারভেটরি সিঙ্গাপুরের জেসন স্কট হেরিন বিবিসিকে বলেছেন, মধ্যাকর্ষণ টানের ফলে এই ধ্বংসাবশেষ নিচের দিকে আরও ঘণ বায়ুমণ্ডলের দিকে নামতে থাকবে, এর ফলে মধ্যাকর্ষণ টান এবং নিচের দিকে নেমে আসার গতিবেগ আরও বাড়তে থাকবে।
তিনি বলেন, একবার এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে, বস্তুটি একটি একটি নির্দিষ্ট দিকে নিচের দিকে ধেয়ে আসতে থাকবে।
ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডল ক্রমেই ঘন হতে থাকায় রকেটের ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ আগুনে পুড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যে অংশগুলো পুড়বে না সেগুলো পৃথিবীতে ভেঙে পড়বে।যদি এসব কিছু অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়ে থাকে তাহলে কোথায় রকেটের ধ্বংসাবশেষ পুড়বে এবং কোথায় এসে পড়বে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বা সঠিক পূর্বাভাসও দেওয়া যাবে না।