ঝিনাইদহে আম চাষিদের ঘরে ঘরে এখন কা;ন্না। লকডাউনের কারণে বাজার পড়ে যাওয়া ও যানবাহনের অভাবে বাগানেই আম প;চে যাচ্ছে। করোনাকালীন সময় পুলিশ ও প্রশাসনের বাধায় আম বাজারে তুলতে পারছেন না চাষিরা। ফলে ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি অফিসে তথ্যমতে এ বছর জেলায় দুই হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৫৮০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৩৭০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৭১০ হেক্টর, মহেশপুরে ৫০০ হেক্টর, শৈলকূপা ২৫ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডুতে ২৬ হেক্টর। এসব বাগানে এ বছর ৩৩ হাজার ৫১১ টন আম উৎপাদন হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের বুলবুল আহম্মেদ বাপ্পি ঋণ নিয়ে ছয় বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের আম চাষ করেছিলেন। ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিওতে তার দেনা ছয় লাখ টাকা। কিন্তু তিনি এখন ভালো দামে আম বিক্রি করতে পারছেন না। দাম না পাওয়ায় গাছেই তার আম পেকে নষ্ট হচ্ছে।
একই গ্রামের সন্টু জোয়ারদার বাগানে আমের ব্যাপক ক্ষতি দেখে শনিবার দুপুরে বাগানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনিও ঋণ নিয়ে আম চাষ করেছিলেন। ওই গ্রামের সাজেজার রহমানের সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে। তিনি কিছু আম বিক্রি করতে পারলেও এখন আর ব্যাপারীরা আম কিনতে আসছে না। কাশিমনগর গ্রামের মোদাচ্ছের, তোফাজ্জল হোসেন ও আলীনুর রহমানও জানালেন তাদের কষ্টের কথা।
আম চাষি বুলবুল আহম্মেদ বাপ্পি জানান, এখন আমের ভরা মৌসুম চলছে। অথচ বাগানে কোনো ব্যাপারী আসছেন না। কিছু ব্যাপারী বাগান কিনে বায়না করে গেলেও তাদের অপেক্ষায় থেকে থেকে বাগানের আম গাছেই ন;ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সন্টু জোয়ারদার বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ফরিদপুর ও পিরোজপুর জেলার ব্যাপারীদের পদভারে এ সময় আম বাগান মুখরিত থাকতো। এখন আর কেউ আম কিনতে আসছেন না। কিছু ব্যাপারী আসলেও তারা ৬৮০ টাকা মণ আম কিনতে চাচ্ছেন। এ দামে আম বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে।
এলাকার বড় আম চাষি সাজেজার রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের মোকাম জেলার কোটচাঁদপুরে। সেখান থেকে ১০ দিন আগেও দেড়শ থেকে দুইশ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো। এখন ৫০ ট্রাক আমও বিক্রি হচ্ছে না।
কোটচাঁদপুরের আড়তদার মোমিনুর রহমান বলেন, করোনার কারণে আম বাজারজাত ও পরিবহন করা যাচ্ছে না। শনিবার পর্যন্ত সবচেয়ে ভালে আম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা মন। আর বেশির ভাগ আম ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, চাষিদের আম পরিবহন সহজতর করার জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু করোনার ভ;য়াল বিস্তার ও নানা বিধিনিষেধের কারণে চাষিরা আম বিক্রি করতে পারছেন না।