ছোট ভাই আবদুল হাসিমের ছেলে রবির বুকে টিউমার। ভাইয়ের স্ত্রী আমেনা বেগম ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় হাসপাতালে ছুটছেন বেশ কয়েক দিন ধরে। বৃহস্পতিবার (০৪ অক্টোবর) ভাইকে রান্না করে খাওয়ানোর জন্য ভাইয়ের বাড়ি নেকজানপুর গ্রামে আসেন খোরশেদা বেগম খুশি (৫৫)।
হঠাৎ বৃহস্পতিবার ভোরে হাসিমের বাড়িতে হামলা। অসুস্থ হাসিম তখন বাড়িতেই। হামলা করা হয় তার ওপর। ভাইকে রক্ষা করতে ছুটে আসেন বোন। এমন সময় প্রতিপক্ষ হাসিমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। সেই গুলিতে বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান খুশি।
ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ভোরে নরসিংদী সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত খুশিসহ তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৩০ জন।
নিহতরা হলেন- নেকজানপুর এলাকার পটু মিয়ার ছেলে মো. আমির হোসেন (৫০), আবদুল জলিলের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২২) ও আবদুল মনু মিয়া মেয়ে খুশি বেগম (৫৫)।
নিহত খোরশেদা বেগম খুশির ছেলে মাইন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের জয়নগর গ্রামে। মামাতো ভাই অসুস্থ হওয়ায় মামাকে রান্না করে খাওয়ানোর জন্য গত বৃহস্পতিবার মামার বাড়িতে আসেন মা। আজকে ভোরে প্রতিপক্ষের লোকজন যখন মামাকে মারধোর করেছিল তখন আমার মা বাঁধা দিতে গেলে তার বুকে গুলি করে দেয়। আর ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে মামাকেও গুলি করে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় তাঁরা।’
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লাহ মিয়ার দ্বন্দ্ব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে প্রতিপক্ষ আসাদুল্লাহ প্রথমে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে শেষদিনে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। বিষয়টি তাঁর সমর্থকরা ভালোভাবে নেয়নি।
এদিকে ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যপদে চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থক আবুল খায়ের এবং আসাদুল্লাহর সমর্থক রিপন মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবুল খায়ের সমর্থকদের ওপর প্রতিপক্ষ রিপনের সমর্থকরা দেশি ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আকস্মিক হামলা চালান। একপর্যায়ে দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান কালের কণ্ঠকে বলেন, মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল খায়ের ও রিপন গ্রুপের মধ্যে আকস্মিক সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসাপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহত ১০-১২ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর ৭-৮ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।