গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া। ওই বন্দী তার হাতে-পায়ে ধরলেও তিনি ছাড়েননি। সেই নির্যাতনের জেরে পাপিয়াকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার (৩ জুলাই) বিকেল ৫টায় বিশেষ নিরাপত্তায় তাকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান। তিনি জানান, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে কারাগার অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বন্দী শামীমা নুর পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সাবেক বন্দী রুনা লায়লা বলেন, ‘আমার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা ছিল। সেই টাকা কেড়ে নেয়ার জন্য কারাগারের হাজতি যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াসহ তার সহযোগীরা সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে নিয়ে যায়। টাকা চাইলে দিতে অস্বীকার করলে তারা জোর করে সেই টাকা নিয়ে যায়। পরে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে আমাকে মারধর করে। আমাকে না মারার জন্য পাপিয়ার হাত-পায়ে ধরেছি। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি। আরও বেশি করে আমারে মেরেছে।’
জানা গেছে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে বন্দী থাকার সময় পাপিয়া ও তার অপর সহযোগীর বিরুদ্ধে কারাগারের এক হাজতি শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে নির্যাতন এবং টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কড়িহাতা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে এবং মৃত এ কে এম মাহমুদুল হকের স্ত্রী। তিনি ঢাকার কোতোয়ালি থানার ৭৩৫ নম্বর মামলার আসামি। গত ১৬ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন রুনা লায়লা। তিনি গত ২৭ জুন জামিনে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে গত ২৫ জুন লিখিত অভিযোগ দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আব্দুল করিম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলেন, তার বোন রুনা লায়লার কাছ থেকে ৭ হাজার ৪০০ টাকা কেড়ে নিতে কারাগারে দায়িত্বে থাকা হাবিলদার ফাতেমা বেগম ও নাসিমা আক্তার এবং হাজতি ও কয়েদিসহ শামীমা নুর পাপিয়া, সোনালী, আনন্দিকা, অবন্তিকা ও নাজমা তাকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তিনি রক্তবমি করেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর আবার তাকে পেটানো হয়। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে কারাকর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেয়ার পর রুনার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগীরা ১৯ জুন রুনাকে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। একপর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিস বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনা লায়লার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে পারেননি।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, ‘এক বন্দীকে নির্যাতনের ঘটনায় তিনজনকে শোকজ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শোকজ করা তিনজন হলেন- কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার, ডেপুটি জেলার জান্নাতুল তায়েবা ও মেট্রন হাবিলদার ফাতেমা।’
তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া কারাগারের ভেতরে এমন ঘটনা যাতে আর না হয়, সে বিষয়েও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।