কেমন হয় বলুনতো, যদি একটি উপাদান দিয়ে চুল এবং ত্বকের যত্ন করা যায়? কি অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, এমন কোন উপাদান কি আছে, যা ত্বক, চুল সবকিছুর সমস্যা সমাধান করে দিবে? হ্যাঁ, এমন একটি উপাদানই হলো ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
অধিকাংশ বিউটি প্রোডাক্টে এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বক এবং চুলের জন্য বেশ উপকারী। যদিও আমরা সাধারণত চুল পড়া রোধের জন্য ভিটামিন ই ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু শুধুমাত্র চুল পড়া নয় এটি ত্বক গ্লো করতেও ব্যবহার করা হয়। কিভাবে ত্বক এবং চুলে ভিটামিন ই ব্যবহার করবেন সেটি নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের ফিচারটি। দেখে নিন তবে এবার!ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ত্বক ও চুলের যত্ন যেভাবে করবেনঃ
১) ত্বকের যত্নঃ
১. উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্যঃ যা যা লাগবে- ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২-৩টি, টকদই- ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস- ১ চা চামচ, গোলাপ জল।
যেভাবে প্যাক তৈরি করবেন: ১) একটি পাত্রে ২-৩টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল, টকদই এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিন। ২) এবার একটি তুলোর বলে গোলাপ জল মিশিয়ে সেটি দিয়ে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করুন। ৩) এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ৪) প্যাকটি শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বকে সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করুন।
কার্যকারিতাঃ ভিটামিন ই এবং টকদই ত্বকের ধুলোবালি দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়া ত্বকের বলিরেখা দূর করতেও ভিটামিন ই ভূমিকা রাখে। টকদইতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বক ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। তবে সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীরা এই প্যাকটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। লেবুর রস সেনসিটিভ ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
২. পিম্পলের জন্যঃ যা যা লাগবে- ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২-৩টি
যেভাবে তৈরি করবেনঃ ১) একটি পাত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিয়ে তার থেকে ভিটামিন ই বের করে নিন। ২) এটি সরাসরি ত্বকের পিম্পলের উপর ব্যবহার করুন। ৩) এটি সারারাত ত্বকে রাখুন। পরেরদিন সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পিম্পল এবং পিম্পলের দাগ না কমা পর্যন্ত এটি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
কার্যকারিতাঃ ভিটামিন ই-তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের কোষ সারিয়ে তোলে এবং ব্রণের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
৩. গ্লোয়িং ত্বকের জন্যঃ যা যা লাগবে: ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ৩-৪টি, পেঁপের খোসার পেস্ট- ১ কাপ, মধু- ১ চা চামচ
যেভাবে তৈরি করবেন: ১) পেঁপের খোসা পেস্ট করে নিন। ২) এই পেঁপের খোসার পেস্টের সাথে ভিটামিন ই, মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ৩) এইবার প্যাকটি মুখ এবং ঘাড়ে ব্যবহার করুন। ৪) প্যাকটি শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ভাল ফলাফলের জন্য সপ্তাহে তিনবার প্যাকটি ব্যবহার করুন।
কার্যকারিতাঃ পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন (papain) নামক উপাদান যা ত্বকের মলিনতা দূর করে থাকে। আর ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করে এবং মধু ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে।
৫. শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ যা যা লাগবে- ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২টি, মধু- ২ টেবিল চামচ, দুধ- ২ টেবিল চামচ
যেভাবে তৈরি করবেনঃ ১) একটি পাত্রে মধু, দুধ এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন। ২) এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। প্যাকটি ত্বকে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ৩) ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুখ ধোয়ার পর ত্বকে হালকা কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দুই তিনবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
কার্যকারিতাঃ ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে ভিতর থেকে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন ই ত্বকের রুক্ষতা হ্রাস করে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
৬. ত্বকের কালো দাগের জন্যঃ যা যা লাগবে- অ্যালোভেরা জেল বা ঘৃতকুমারীর রস- ১ টেবিল চামচ, ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২টি
যেভাবে তৈরি করবেন: ১) অ্যালোভেরা জেল এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি পাত্রে মিশিয়ে নিন। ২) এই মিশ্রণটি ত্বকের কালো দাগের উপর ব্যবহার করুন ৩) ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই প্যাকটি ত্বকে রাখুন।
৪) তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।
কার্যকারিতাঃ অ্যালোভেরা জেল ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক ভিতর থেকে মেরামত করে এবং ত্বকের কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। আর ভিটামিন ই-এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের র্যাডিক্যাল ড্যামেজ সারিয়ে তোলে।
২) চুলের যত্নঃ ১. ঘন ও মজবুত চুলের জন্য
যা যা লাগবে- ডিম- ২টি, আমন্ড অয়েল অথবা অলিভ অয়েল- ২ টেবিল চামচ, ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২টি
যেভাবে প্যাক তৈরি করবেনঃ ১) ডিম দুটি ভালো করে ফেটে নিন। ২) ভালো করে ডিম ফাটা হয়ে গেলে এতে ভিটামিন ই, অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিন। ৩) এই প্যাকটি চুলে ব্যবহার করেন। ৪) ৩০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কার্যকারিতাঃ এই প্যাকটি চুল পড়া হ্রাস করে। তার সাথে সাথে চুলকে করে তুলবে কোমল এবং স্বাস্থ্যোজ্জল। চুল ঘন করতেও এই প্যাকটি বেশ কার্যকর।
৭. সিল্কি চুলের জন্যঃ যা যা লাগবে- অ্যালোভেরা জেল- ১ চা চামচ, ভিনেগার- ২ চা চামচ, গ্লিসারিন- ১ চা চামচ, ডিম- ১টি, ভিটামিন ই ক্যাপসুল- ২ টি
যেভাবে প্যাক তৈরি করবেন- ১) সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ২) এই প্যাকটি চুলে ব্যবহার করুন। ৩) এটি চুলে ৩০-৪০ মিনিট রাখুন। ৪) তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
এই প্যাকটি চুল পড়া কমাবে। চুলের রুক্ষতা দূর করে চুল নরম কোমল করে তুলবে। তাহলে, জেনে গেলেনতো কোন উপাদানটি ত্বক এবং চুলের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে। এখন থেকে রূপচর্চার রুটিনে ভিটামিন ই ক্যাপসুল রাখতে ভুলবেন না যেন!